সাভারে সাংবাদিকের পুত্রসহ দুই শিক্ষার্থীকে কুপিয়ে জখম, গ্রেপ্তার ৪

ঢাকার সাভারে পূর্বশত্রুতার জের ধরে সাংবাদিক পুত্রসহ দুই শিক্ষার্থীকে কুপিয়ে জখম করেছে কিশোর গ্যাং সদস্যরা। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে কিশোর গ্যাং 'ভাই-ব্রাদার' গ্রুপের ৪ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
সোমবার (১৮ মার্চ) দুপুরে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন সাভার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আকবর আলী খান। এর আগে, রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে সাভারের রেডিও কলোনি বাসস্ট্যান্ড এলাকায় এ হামলার ঘটনা ঘটে।
আহত দু'জন হলেন- সাভারের কলমা এলাকার বাসিন্দা ও সাভারে কর্মরত দৈনিক যুগান্তর পত্রিকার নিজস্ব প্রতিবেদক মতিউর রহমানের ছেলে জিসান প্রামাণিক (১৫) ও একই এলাকার কামরুল ইসলামের ছেলে সিয়াম রাজা (১৫)।
জিসান প্রামাণিক সাভারের বিপিএটিসি স্কুল অ্যান্ড কলেজের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী ও সিয়াম কলমা এলাকার কলমা ওয়াজ আলী মডেল স্কুলের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, সাভার পৌরসভার ডগরমোড়া মহল্লার সাভার মডেল কলেজ রোড এলাকার মো. মোস্তফার ছেলে ও কিশোর গ্যাং 'ভাই-ব্রাদার' গ্রুপের প্রধান মো. আব্দুল লতিফ ওরফে লেট লতিফ (২১), শাহীবাগ চৌরাস্তা এলাকার মো. ইয়াছিন খানের ছেলে আনোয়ার হোসেন ওরফে সোহান খান (১৬), চাপাইন-সিআরপি এলাকার মো. মাসুদ প্রধানের ছেলে মো. ছাদিক হাসান মুনতাসির (১৫) এবং শাহীবাগ এলাকার মো. আব্দুল্লাহর ছেলে সিরাজুল ইসলাম (১৯)।
জানা গেছে, কিশোর গ্যাং 'ভাই-ব্রাদার' গ্রুপের প্রধান মো. আব্দুল লতিফ ওরফে লেট লতিফ স্কুল শিক্ষার্থী জিসান প্রামাণিককে তার অনুসারী হওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছিলেন। বখাটে লতিফের কথা না শুনায় চলতি বছরের ২৬ জানুয়ারি বিপিএটিসি স্কুল কর্তৃপক্ষের আয়োজিত বার্ষিক বনভোজনের তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট দ্বন্দের জেরে কিশোর গ্যাং লিডারের নেতৃত্বে জিসানসহ দুইজনকে পূর্বপরিকল্পিত ভাবে কুপিয়ে হত্যার চেষ্টা চালায় হামলাকারীরা।
আহত জিসানের বাবা মতিউর রহমান বলেন, প্রায় এক মাস আগে গাজীপুরের সাফারি পার্কে শিক্ষার্থীদের বার্ষিক বনভোজনে গিয়েছিলো বিপিএটিসি স্কুল কর্তৃপক্ষ। সে সময় নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের সাথে বাসে ওঠা নিয়ে ধাক্কাধাক্কিতে জড়িয়ে পড়ে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা। পরে উপস্থিত শিক্ষকদের হস্তক্ষেপে বিষয়টি সাময়িকভাবে মিমাংসা করা হয়।
বিষয়টি জানার পর আমি বিপিএটিসি স্কুল কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবগত করার পাশাপাশি পরবর্তীতে যেন আর কোন অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে সে বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানাই।
মতিউর রহমান অভিযোগ করে বলেন, রবিবার ইফতারের পর বন্ধু সিয়ামের সঙ্গে রেডিও কলোনি বাসস্ট্যান্ড এলাকায় যায় জিসান। এ সময় পূর্বপরিকল্পিতভাবে আব্দুল লতিফসহ কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা তাদের ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে জখম করে।
মামলা সূত্রে জানা যায়, রবিবার সন্ধ্যায় আহত স্কুল শিক্ষার্থী জিসানকে তার বন্ধু সিয়ামের মাধ্যমে সাভার সদর ইউনিয়নের কলমা এলাকার নিজ বাড়ি থেকে সাভার পৌরসভার রেডিও কলোনি এলাকায় মোবাইল ফোনে ডেকে নিয়ে অতর্কিত হামলা করে হত্যার চেষ্টা চালায় কিশোর গ্যাং 'ভাই-ব্রাদার' গ্রুপের প্রধান মো. আব্দুল লতিফ ওরফে লেট লতিফের নেতৃত্বে প্রায় ১৯ জন গ্যাং সদস্য। এ ঘটনায় বন্ধুকে বাঁচাতে গিয়ে সিয়ামও গ্যাং প্রধান লেট লতিফের দ্বারা ছুরিকাঘাতে গুরুতর আহত হয়।
তাদের উদ্ধার করে প্রথমে সাভার সুপার মেডিকেল পরে অবস্থার অবনতি হওয়ায় চিকিৎসকদের পরামর্শে এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দ্রুত ভর্তি করে স্থানীয়রা। আহত দুই শিক্ষার্থীর একাধিক স্থানে অস্ত্রোপচার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক।
এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ব্যবস্থাপক সাব্বির হোসেন বলেন, রাত নয়টার দিকে আহত দুই কিশোরকে হাসপাতালে আনা হয়। ধারালো অস্ত্রের আঘাতে জিসানের পিঠের দুটি স্থানে গভীর ক্ষত এবং সিয়ামের নিতম্বে একটি গভীর ক্ষত রয়েছে। তাদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
সাভার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আকবর আলী খান বলেন, অনাকাঙ্ক্ষিত এই ঘটনার ৫ ঘণ্টার মধ্যে মূলহোতাসহ ৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এদের মধ্যে প্রাপ্তবয়স্ক দুইজনকে দুই দিনের রিমান্ডের আবেদন জানিয়ে বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। তদন্তে আরো যাদের সম্পৃক্ততা পাওয়া যাবে তাদের কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।
নতুনসময়/এএম
ঢাকা, সাভার, সাংবাদিক, শিক্ষার্থী, কিশোর গ্যাং, ভাই-ব্রাদার, পুলিশ