ঢাকা সোমবার, ২১শে এপ্রিল ২০২৫, ৯ই বৈশাখ ১৪৩২


রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ফের নবী হোসেন আতঙ্ক


৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৯:২৭

প্রতিকি

মিয়ানমারের অভ্যন্তরে সেনাবাহিনী ও বিদ্রোহী আরকান আর্মির যুদ্ধের মধ্যে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নতুন করে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। সীমান্তের উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী নবী হোসেন দলবলসহ কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে প্রবেশ করেছে বলে তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। এতে করে ক্যাম্প ও ক্যাম্পের বাইরের নিরাপত্তা নিয়ে লোকজন শঙ্কিত হয়ে পড়েছে।

উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আলতাজ হোসেন জানান, মিয়ানমার থেকে সশস্ত্র সন্ত্রাসী নবী হোসেন অনুসারীদের নিয়ে মঙ্গলবার গভীর রাতে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ঢুকেছে। রহমতবিল সীমান্তের ওপারে আস্তানা গেড়ে থাকা ৫০-৬০ জন সন্ত্রাসী অস্ত্র নিয়ে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে প্রবেশ করে। তাদের মধ্যে ৩০-৩৫ জনকে স্থানীয়রা আটক করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে তুলে দিয়েছে। পালংখালীর ইউপি চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, রহমতবিল ও আনজুমানপাড়া সীমান্ত দিয়ে অনেকে পালিয়ে এসেছে। তাদের বেশিরভাগই অস্ত্র জমা দিয়ে বিজিবি হেফাজতে আশ্রয় নিয়েছে। তবে এর বাইরেও ৩০ জনের বেশি অস্ত্রধারী রোহিঙ্গাকে স্থানীয়রা আটক করেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে নবীর অনুসারীদের কথা নিশ্চিত করা না হলেও বেশ কয়েকজন অস্ত্রধারী স্থানীয়দের হাতে ধরা পড়েছে বলে স্বীকার করা হয়েছে। ক্যাম্পে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের ঢুকে পড়ার বিষয়ে পুলিশ সুপার জানান, এমন তথ্য তার জানা নেই। বিষয়টি সত্য হলে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ঝুঁকি বাড়বে। এ ব্যাপারে ক্যাম্পের নিরাপত্তায় নিয়োজিত এপিবিএনসহ অন্য সব বাহিনীর সঙ্গে আলাপ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এদিকে ৩২৮ জনের বাইরে আর কাউকে আটক করা হয়েছে কিনা সে বিষয়ে তথ্য দিতে পারেননি বিজিবির সদর দপ্তরের জনসংযোগ কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম।

কে এই নবী হোসেন : ২০২২ সালের ৩০ এপ্রিল দৈনিক যুগান্তরে ‘হাজার কোটি টাকার অস্ত্র আনছে রোহিঙ্গা নবী’ শিরোনামে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এরপর আলোচনায় চলে আসে নবী হোসেন। ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়াদের একজন নবী। রাখাইন রাজ্যের মংডু শহরের ঢেকিবনিয়ার মোস্তাক আহমদের ছেলে নবী উখিয়ার বালুখালী ৮ নম্বর ক্যাম্পের বি ব্লকের ৪১ নম্বর ঘরে থাকতেন। তখনই তিনি অপরাধ চক্র গড়ে তোলেন। পুলিশ ও রোহিঙ্গাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী-নবী হোসেনের এক ভাই ভুলু ক্যাম্প-৮ পশ্চিমের ডি ব্লক এবং আরেক ভাই মোহাম্মদ কামাল বি-৪১ ব্লকের মাঝির দায়িত্বে ছিলেন। রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের সশস্ত্র গোষ্ঠী আরসার হুমকিতে এখন তারা আত্মগোপনে।

বালুখালী এলাকার চারটি ক্যাম্প (ক্যাম্প-৮ পশ্চিম, ৯, ১০ ও ১৪) নবী হোসেন বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে বলে খবর পাওয়া যায়। এ বাহিনী মাদক পাচার, চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধে জড়িত হিসাবে চিহ্নিত। নবীর বিরুদ্ধে পাঁচটি হত্যা মামলাসহ ১২টি মামলা রয়েছে বাংলাদেশে। নবী হোসেনকে জীবিত অথবা মৃত ধরিয়ে দিতে ১০ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করে ২০২২ সালের মার্চে উখিয়া ও টেকনাফে পোস্টার সেঁটেছিল বিজিবির কক্সবাজার ৩৪ ব্যাটালিয়ন। সেই পোস্টারে জঙ্গলের ভেতরে অস্ত্র হাতে দাঁড়ানো নবী হোসেনের ছবি ছাপানো হয়। এরপর নবী পালিয়ে যায় এবং সেখানে বসেই রোহিঙ্গা ক্যাম্পের অপরাধ চক্র নিয়ন্ত্রণ করে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে রহমতবিল, ধমনখালী এলাকার কয়েকজন জানায়, নবীর দলের লোকদের হাতে ভারী অস্ত্র দেখা গেছে। রোহিঙ্গাদের জন্য কক্সবাজারে ৩৩টি আশ্রয় শিবির রয়েছে। এসব ক্যাম্পের নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছে এপিবিএন। বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নিরাপত্তায় নিয়োজিত ৮ এপিবিএনের সহ-অধিনায়ক পুলিশ সুপার খন্দকার ফজলে রাব্বি বলেন, নবী হোসেন ও তার দলের মঙ্গলবার রাতে সীমান্ত অতিক্রমের খবর তারা শুনেছেন। তবে ক্যাম্পে তাদের ঢোকার খবরটি তার জানা নেই। তবে ক্যাম্পে প্রবেশ করতে পারে-এমন আশঙ্কায় সর্বোচ্চ সতর্কতা পালন করা হচ্ছে। তাকে পাওয়ামাত্রই গ্রেফতার করা হবে। ক্যাম্পে যাতে কেউ প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য এপিবিএন সজাগ রয়েছে।