নিজ দেশ মিয়ানমারে ফিরে যেতে একজোট রোহিঙ্গারা

কক্সবাজারের উখিয়ার লম্বাশিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এক বিশাল সমাবেশ করেছেন রোহিঙ্গারা। এ সমাবেশে উখিয়ার বিভিন্ন রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে শত শত নারী পুরুষ যোগ দেন। রোহিঙ্গারা নিজ দেশ মিয়ানমারে ফিরে যেতে একজোট হয়েছে।
সমাবেশ থেকে জাতিসংঘের সংস্থাসমূহকে প্রত্যাবাসন ইস্যুতে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে আলাপ করে দ্রত স্বদেশ ফেরত পাঠানোর দাবি জানানো হয়। না হয় একযোগে মিয়ানমারে ফিরে যাবে বলে হুঁশিয়ারি দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে রাখাইনে চলমান সংঘাতে সেখানে থাকা রোহিঙ্গাদের ধর্য্য ধরার আহ্বান জানিয়েছে। কোনভাবেই স্বদেশ ছেড়ে পালিয়ে না আসার অনুরোধ জানানো হয়।
শুক্রবার (২ ফেব্রয়ারি) সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত তিন ঘন্টা ব্যাপী উখিয়ার লম্বাশিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এ সমাবেশ চলে।এ সমাবেশে সবার গায়ে সাদা শার্ট ও লুঙ্গি পরিহিত।
সমাবেশে রোহিঙ্গারা নেতারা দাবি করেন, এখনো যে সমস্ত রোহিঙ্গা মিয়ানমারে আছেন তাদের নির্যাতন করা হচ্ছে। তাদের বিদ্যুৎ, ইন্টারনেট লাইন, গ্যাস সরবরাহসহ সকল সুবিধা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
শুধু তাই নয় মিয়ানমারে থাকা রোহিঙ্গাদের হত্যা এবং তাদের দেশ থেকে বিতাড়িত করার চেষ্টা করা হচ্ছে যা বন্ধ করতে হবে। এছাড়াও মিয়ানমারে বসবাসরত রোহিঙ্গারা দেশ ছেড়ে না আসার আহ্বান জানান।
নেতারা আরও বলেন, খুশিতে নয়, গণহত্যার শিকার হয়ে প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে এসেছি। আমরা এক মুহূর্ত এখানে থাকতে চাই না। আমরা এমন জীবন চাই না। নিজ দেশ মিয়ানমারে ফিরে যেতে চাই।
আমাদের দাবিগুলো পূরণে মিয়ানমার যাতে বাধ্য হয়, সে জন্য বিশ্ব সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসন দ্রুত করতে হবে। আগামী এক বছরের মধ্যে বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গারা দেশে ফিরবে। যথেষ্ট হয়েছে এবার আন্দোলনের মাধ্যমে রোহিঙ্গারা তাদের অধিকার ফিরে পাওয়ার আন্দোলনে যাবে বলে বক্তব্য দেন জোর গলায়।
এসময় বক্তব্য দেন মাষ্টার মুসা,মাষ্টার কামাল ও মাষ্টার শহীদুল্লাহ্। আয়োজকরা জানিয়েছে, উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি ক্যাম্প থেকে আসে রোহিঙ্গাদের হেড মাঝি, সাব মাঝি, ধর্মীয় নেতা ও নারীরা এ সমাবেশ অংশ নিয়েছেন।যেখানে একযোগে রোহিঙ্গাদের ‘অনেক হয়েছে আর নয়, এবার স্বদেশ মিয়ানমারে ফিরতে চান বলে শ্লোগান দিতে শুনা গেছে।
উখিয়ার বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দা সৈয়দ আলম বলেন আমাদের দেশ আছে। মিয়ানমারের আরকান আমাদের দেশ। আমরা দেশে ফিরে যেতে চাই।
কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের হাসিনা বানু বলেন এখানে এখন শান্তি নাই।প্রতিদিন খুন-খারাবি লেগে আছে। দ্রুত নিজ দেশে ফেরত যেতে চাই।
সমাবেশে আসা ক্যাম্প ২৬ এর বাসিন্দা মো. হাবিব বলেন, এক বছর-দুই বছর করে ৭ বছর পার করছি পরদেশে। এখানে আর থাকতে চাই না, নিজেদের অধিকার নিয়ে স্বদেশ মিয়ানমারে ফিরে যেতে চাই।
রোহিঙ্গাদের সংগঠন আরওএফডিএমএনআরসি’র সংগঠক সৈয়দ উল্লাহ বলেন, মিয়ানমারের আরকানে আমাদের যারা আত্মীয়-স্বজন, মা-বাবা ও ভাই-বোন আছে। তাদের ওপর অনেক নির্যাতন হচ্ছে।
তাদের প্রতি আহ্বান থাকবে, তারা যেন কোনদিনও দেশ ছেড়ে চলে না আসে। আর সমাবেশ থেকে জাতিসংঘের সংস্থা সমূহকে প্রত্যাবাসন ইস্যুতে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে আলাপ করে উদ্যোগ গ্রহণ না করলে একযোগে মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দেয়া হয়।
রোহিঙ্গাদের সংগঠন আরওএফডিএমএনআরসির প্রতিষ্ঠাতা মো. কামাল হোসাইন বলেন, ‘সমাবেশে মা-বাবা, ভাই-বোন যারা এসেছেন, তাদের অধিকার যদি যুবকরা কাঁদে নেয় তাহলে ১ বছরের মধ্যে ইনশাআল্লাহ আমাদের দেশে আমরা ফিরে যেতে পারব।