ঢাকা মঙ্গলবার, ২২শে এপ্রিল ২০২৫, ৯ই বৈশাখ ১৪৩২


টানা বৃস্টি সিলেটসহ পূর্বাঞ্চলে বন্যার শঙ্কা


১৭ জুন ২০২৩ ১৬:৫৪

ছবি সংগৃহীত

মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, সিলেট, রংপুর, ঢাকা ও বরিশাল বিভাগের কোথাও কোথাও ভারী থেকে অতিভারী বর্ষণ হতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এদিকে গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সিলেট, সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোনায় বন্যার আশঙ্কা করা হচ্ছে। 

শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে আগামী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে বলা হয়, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং রংপুর, ঢাকা ও বরিশাল বিভাগের অনেক জায়গায় এবং খুলনা ও রাজশাহী বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা বা ঝোড়ো হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। একই সঙ্গে রাজশাহী ও খুলনা বিভাগ ছাড়া দেশের কোথাও কোথাও ভারী থেকে অতিভারী বর্ষণ হতে পারে। এ সময়ে ঢাকা, রাজশাহী ও খুলনা বিভাগে দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। তবে দেশের অন্যত্র তা সামান্য কমতে পারে। 

এতে আরো বলা হয়- রংপুর, দিনাজপুর, নীলফামারী, যশোর, চুয়াডাঙ্গা এবং কুষ্টিয়া জেলাসহ রাজশাহী বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে, তা কিছু কিছু জায়গা থেকে প্রশমিত হতে পারে। পূর্বাভাসে আরো বলা হয়, লঘুচাপের বাড়তি অংশ পশ্চিমবঙ্গ থেকে বাংলাদেশের দক্ষিণপশ্চিমাঞ্চল হয়ে উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। মৌসুমী বায়ু বাংলাদেশের ওপর মোটামুটি সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে মাঝারি অবস্থায় রয়েছে।

এদিকে, শুক্রবার দেশের অভ্যন্তরীণ নদীবন্দরগুলোর জন্য আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ঢাকা, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, ফরিদপুর, মাদারীপুর, বরিশাল, পটুয়াখালি, নোয়াখালী, কুমিল্লা চট্টগ্রাম, কক্সবাজার এবং সিলেট অঞ্চলসমূহের উপর দিয়ে দক্ষিণ অথবা দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে ঘণ্টায় ৪৫  থেকে ৬০ কিলোমিটার বেগে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়াসহ অস্থায়ীভাবে বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এসব এলাকার নৌবন্দরগুলোকে এক নম্বর সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার সকালে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ২১ দশমিক আট ডিগ্রি সেলসিয়াস ছিল কিশোরগঞ্জের নিকলিতে। 

ফের বন্যার শঙ্কা:

সিলেট ব্যুরো জানিয়েছে, গত বছরের ভয়াবহ বন্যার স্মৃতি মিইয়ে যাওয়ার আগেই সিলেটে ফের বন্যার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। পাশাপাশি সুনামগঞ্জ, নেত্রকোণাসহ পূর্বাঞ্চলের আরো কয়েকটি জেলার নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় এসব এলাকাতেও বন্যার আশঙ্কা করা হচ্ছে। গত তিন দিন ধরে টানা বৃষ্টি হচ্ছে সিলেট ও আশাপাশের জেলাগুলোতে। বৃষ্টি আরো কয়েকদিন অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানিয়েছে সিলেটের আবহাওয়া অধিদপ্তর। এ ছাড়াও গত কয়েকদিন ধরে ব্যাপক বৃষ্টি হচ্ছে সিলেটের উজানে ভারতের মেঘালয় রাজ্যে। এতে নামছে পাহাড়ি ঢল। ঢল আর বৃষ্টিতে সিলেটের নদ-নদীর পানি বেড়ে চলছে। ঢল আর বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে চলতি সপ্তাহেই মাঝারি ধরনের বন্যা হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। সম্ভাব্য বন্যা মোকাবিলায় প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন। গত বছর সিলেটে স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যা হয়। এতে তলিয়ে গিয়েছিল জেলার ৭০ শতাংশ এলাকা। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল জেলার প্রায় সব মানুষ।

ওই বন্যায় ভেঙে যায় প্রায় ১০ হাজার ঘরবাড়ি। গতবারের বন্যার ধকল এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেননি ক্ষতিগ্রস্তরা। ভারী বৃষ্টি হলেই সিলেট নগরে জলাদ্ধতা দেখা দেয়। গত বুধবার, বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার সকালের বৃষ্টিতেও তলিয়ে যায় নগরের অনেক এলাকা। এমন অবস্থায় আবার বন্যার আশঙ্কায় সিলেটে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। 

আবহাওয়া অধিদপ্তরের সিলেট কার্যালয় জানায়, বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা থেকে শুক্রবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ১৩৫ দশমিক চার মিলিমিটার বৃষ্টি হয়। আর সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত বৃষ্টি হয় ৭৫ মিলিমিটার। এর আগে বুধবার সকাল ৬টা থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ২৭১ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়।

আবহাওয়া অধিদপ্তর সিলেটের সহকারী আবহাওয়াবিদ শাহ মো. সজীব হোসাইন বলেন, আগামী ৪৮ ঘণ্টা সিলেটে ভারি বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। এ জন্য সবাইকে সতর্ক থাকা প্রয়োজন। বিশেষ করে সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে পাহাড়ি ঢল নামতে পারে। তবে সিলেটে নদ-নদীর পানি বাড়লেও এখন পর্যন্ত বিপদসীমা অতিক্রম করেনি বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।

এদিকে বন্যা মোকাবিলায় আগাম প্রস্তুতি নিতে বৃহস্পতিবার জেলা প্রশাসক (ডিসি) কার্যালয়ে জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা হয়।

ডিসি মজিবর রহমান বলেন, ‘সিলেটে গত কয়েক দিন ধরে প্রচুর বৃষ্টিপাত হচ্ছে। পূর্বাভাস রয়েছে আগামী ১৫ দিন সিলেটজুড়ে অতিবৃষ্টি হবে। এই কয় দিনে এক হাজার ৪০০ মিলিমিটারের বৃষ্টিপাত হতে পারে সিলেট জেলায়। ফলে সিলেটে বন্যা হওয়ার সমূহ আশঙ্কা রয়েছে।’

তিনি বলেন, বন্যা হলে এর ক্ষয়ক্ষতি বিবেচনায় আমরা আগাম প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে চাই। এই লক্ষ্যে বৃহস্পতিবার জেলার সকল উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও চেয়ারম্যানের সঙ্গে ভার্চ্যুয়ালি বৈঠক করেছি। সকলের কাছ থেকে নিজ নিজ উপজেলার পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত হয়ে সার্বিক প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।

ইউএনও ও চেয়ারম্যানদের বরাত দিয়ে ডিসি বলেন, নদীবেষ্টিত উপজেলাগুলোর নদীতে গত কয়েক দিনে বেশ পানি বেড়েছে, তবে এখনো বিপদসীমার ওপরে উঠেনি। তারা (ইউএনও ও চেয়ারম্যান) জানিয়েছেন, নিজ নিজ উপজেলায় নগদ অর্থ ও চাল মজুদ রয়েছে, তবে তা পর্যাপ্ত নয়। নতুন করে চাহিদা পাঠাতে নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। জেলা প্রশাসনে পর্যাপ্ত চাল ও নগদ অর্থ মজুদ রয়েছে। চাহিদামতো উপজেলাগুলোতে পাঠানো হবে। বিভিন্ন উপজেলায় পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারীদের অবস্থা বিবেচনায় দ্রুত সরিয়ে নিতে প্রস্তুত থাকার জন্য সব উপজেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলেও জানান ডিসি।