ঢাকা সোমবার, ২১শে এপ্রিল ২০২৫, ৯ই বৈশাখ ১৪৩২


সাভারে ছাত্রলীগের অফিসে ডেকে নিয়ে ছুরিকাঘাত দুই নারীসহ আহত ৩


১৬ জুন ২০২৩ ২০:২৪

সংগৃহিত

ঢাকার সাভারে বিচার করতে মা-ছেলে ও স্বজনদের অফিসে ডেকে নিয়ে লাঞ্ছিত ও বেধড়ক পিটিয়ে সুইস গিয়ার দিয়ে ছুরিকাঘাত করার অভিযোগ পাওয়া গেছে স্থানীয় এক ছাত্রলীগ নেতা এবং তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে।

এ ঘটনায় দুই নারীসহ আহত তিনজনকে সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।বৃহস্পতিবার (১৫ জুন) দিবাগত রাত সাড়ে ৯ টার দিকে সাভার পৌরসভার ছায়াবীথি এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

ছুরিকাঘাতে আহতরা হলেন, সালেহা বেগম (৪০), রাবেয়া খাতুন (২৮) ও আব্দুল্লাহ মিয়া(২২)। তাদের তিনজনের মাথায় একাধিক সেলাই দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি রিকশাচালক আব্দুল্লাহ মিয়ার ডান পায়ের হাঁটুর উপরে একাধিক সেলাই লেগেছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।

এ ঘটনায় তাৎক্ষণিক অভিযান চালিয়ে জড়িত সাভারের দুর্ধর্ষ কিশোর গ্যাং পিনিক রাব্বি বাহিনীর সদস্য ইমন ও গ্রেনেটকে আটক করেছে পুলিশ। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সাভার মডেল থানার উপ-পরিদর্শক ও ডিউটি অফিসার মো.হাসান সিকদার।

ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করে বলেন, সাভার পৌরসভার ১ ও ৩ নং ওয়ার্ডের নিয়ন্ত্রণে রাখা কিশোর গ্যাংয়ের প্রধান রাব্বি ওরফে পিনিক রাব্বি(২৫), তার আপন ভায়রা ভাই ছাত্রলীগ নেতা সুভাষ খান হৃদয়(২৪), ইমন(২১), গ্রেনেট(২২), শান্ত(২৮), ওবায়দুর (২৪), শাকিল (২৩), বাবু (২৪), হালিম(২৫) ও ইয়াসিন আরাফাত সহ(২৬) অজ্ঞাত আরও ২০ থেকে ২৫ জন মিলে ছাত্রলীগ নেতা সুভাষ খান হৃদয়ের অফিসে বিচারের কথা বলে ধরে নিয়ে যায়। একপেশে বিচারে পুরো পরিবারকে সাভার ছাড়ার হুকুমের রায় মেনে না নেওয়ায় উত্তেজিত হয়ে সালেহা বেগম, রাবেয়া খাতুন ও আব্দুল্লাহ মিয়াকে ছুরিকাঘাত করেছে অভিযুক্তরা।

ভুক্তভোগী ও একাধিক সূত্র জানায়, সাভার পৌরসভার ছায়াবীথি মহল্লায় ভ্যানে করে সবজি বিক্রেতা, ফল বিক্রেতা, জামা কাপড় বিক্রেতা সহ ভাসমান দোকান থেকে দৈনিক চাঁদা আদায় করে কিশোর গ্যাংয়ের প্রধান রাব্বি ওরফে পিনিক রাব্বি ও তার ভায়রা সুভাষ খান হৃদয়। গত ৮ জুন বিকেলে চাঁদা না দেওয়ায় মজিবর নামে এক ভাসমান দোকানের কাপড় ব্যবসায়ীকে মারধর করে রাব্বি ও সুভাষের লোকজন। বিষয়টি দেখতে পেয়ে মহর উদ্দিন নামে এক যুবক সহ স্থানীয়রা মারধরের কারণ জানতে চেয়ে প্রতিবাদ করলে তাকেও মারধর করে উপস্থিত সবাইকে ভয়ভীতি দেখিয়ে স্থান ত্যাগ করতে বাধ্য করে। এই ঘটনার দুইদিন পর ১১ জুন সকালে মহর উদ্দিনের স্ত্রীকে ছায়াবীথি এলাকার আইসক্রিম ফ্যাক্টরির গলিতে বাসার সামনে একা পেয়ে ইভটিজিং ও গতিরোধ করে কু-প্রস্তাব দেয় কিশোর গ্যাং প্রধান পিনিক রাব্বি সহ তার বাহিনীর সদস্যরা। পরে বিষয়টির বিচার চেয়ে সাভার মডেল থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন মহর উদ্দিন এর স্ত্রী রাজিয়া বেগম। থানায় অভিযোগ দেওয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে ছাত্রলীগ নেতা সুভাষ খান হৃদয় বৃহস্পতিবার ১৫ জুন সন্ধ্যার পরে মহর উদ্দিন ও তার মা সালেহা বেগমকে অফিসে ধরে নিয়ে যায়। সেখানে তাদের সাভার ছাড়ার নির্দেশ দেয় সুভাষ খান হৃদয়। ভুক্তভোগী পরিবারটি এই বিচারে অসন্তোষ প্রকাশ করে প্রতিবাদ করলে তাদের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে মারধর শুরু করে। মহর উদ্দিন দৌড়ে পালিয়ে গেলেও তার মা সালেহা বেগম, মহর উদ্দিনের ফুফু রাবেয়া খাতুন ও রিকশাচালক আব্দুল্লাহ মিয়াকে সুরিকাঘাত করা হয়।

স্থানীয়রা বলেন, ছাত্রলীগ নেতা সুভাষ খান হৃদয়ের অফিসের সামনে চিৎকারের আওয়াজ পেয়ে ঘটনাস্থলে গেলে তাদের গুরুতর অবস্থায় দেখতে পাই। পরে তিনজনকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করি।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে অভিযোগ অস্বীকার করে সুভাষ খান হৃদয় বলেন, তার অফিসে মারামারির কোন ঘটনা ঘটেনি তবে অফিসের সামনে আইসক্রিম ফ্যাক্টরির গলিতে ঘটেছে বলে কলটি কেটে দেন। আবারো যোগাযোগ করা হলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান।

এ ব্যাপারে সাভার মডেল থানার ডিউটি অফিসার উপ-পরিদর্শক (এস আই) মো. হাসান শিকদার জানান, ওসি স্যারের নির্দেশে প্রধান অভিযুক্তসহ বাকিদের ধরতে পুলিশের একাধিক টিম অভিযানে রয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যেই অভিযুক্তদের আইনের আওতায় আনা হবে।