ঢাকা মঙ্গলবার, ২২শে এপ্রিল ২০২৫, ১০ই বৈশাখ ১৪৩২


৮ বছরেও চালু হয়নি ‘৩ বিঘা করিডোর এক্সপ্রেস’


২১ অক্টোবর ২০১৮ ১৭:৪৫

বুড়িমারী স্থলবন্দর-ঢাকা রুটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ‘তিন বিঘা করিডোর’নামের একটি নতুন আন্তঃনগর এক্সপ্রেস ট্রেন চালুর কথা ছিল।

কিন্তু গত ৮ বছরেও ট্রেনটি চালু করনি রেলপথ মন্ত্রণালয় ও পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে বিভাগ।

২০১১ সালের ১৯ অক্টোবর পাটগ্রাম উপজেলা এক জনসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ট্রেন চালুর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। ২০১২ সালের ২০ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দ্বিতীয় দফায় লালমনিরহাট সফরে গিয়ে পুনরায় তার প্রতিশ্রুতি দেন। দীর্ঘদিন দরে ট্রেনটি চালু না হওয়ায় স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে হতাশা দেখা দিয়েছে।

লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম উপজেলার বিচ্ছিন্ন এলাকা ‘দহগ্রাম-আঙ্গোরপোতা।’ ১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের সময় বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল মৌজা দুইটি। ৬৪ বছর ‘নিজ ভূমে পরবাসী’ জীবন যাপন করে ২০১১ সালে মুক্তি পায় দহগ্রাম আঙ্গোরপোতাবাসী। ঐতিহাসিক মুজিব-ইন্দিরা চুক্তির বাস্তবায়নের মাধ্যমে ছিটমহলবাসীদের অবরুদ্ধ জীবনের অবসান ঘটে।

পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বলছেন, আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া প্রতিশ্রুতির ‘তিন বিঘা করিডোর’ এক্সপ্রেস ট্রেনটি চালু করা হচ্ছে না।
রেলমন্ত্রী সেসময় বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করা আমার জন্য ফরজ।’ ঢাকায় ফিরে প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের পদক্ষেপ গ্রহণ করার ঘোষণা করেন তিনি। দশম সংসদের মেয়াদ ফুরিয়ে যাচ্ছে, অথচ এখন পর্যন্ত তিনি কোনও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারেননি।

পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের লালমনিরহাট বিভাগীয় সদর দপ্তরের সহকারী পরিবহন কর্মকর্তা সাজ্জাত হোসেন বলেছেন, ‘শুনেছি নতুন কোচ ও লেকোমোটিভ কেনা হলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুত তিন বিঘা করিডোর এক্সপ্রেস ট্রেনটি চালু করা হবে। তবে একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে তা সম্ভব নয়।’

প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী অন্যান্য প্রকল্প বাস্তবায়িত হওয়ার কথা উল্লেখ করে পাটগ্রাম উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ারুল ইসলাম নাজু বলেছেন, ‘তিন বিঘা করিডোর এক্সপ্রেস ট্রেনটি এখন পর্যন্ত চালু করা যায়নি। এটি বাস্তবায়ন না হওয়ায় স্থানীয় সাধারণ মানুষের মাঝে মারাত্মক প্রতিক্রিয়া রয়েছে।

লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক শফিউল আরিফ বলেন, ‘চলতি বছর ১১ জানুয়ারি মাননীয় রেলপথমন্ত্রী লালমনিরহাট সফর করেন। উন্নয়ন মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুতির তিন বিঘা করিডোর এক্সপ্রেস ট্রেনটি চালুর ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এরপর আমরা কোনও কার্যকর পদক্ষেপ চোখে পড়েছে বলে আমার জানা নেই। অবশ্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অন্য সকল প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়িত হয়েছে। ফোর লেন কাজও বাস্তবায়নের পথে রয়েছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে তিন বিঘা করিডোর নামের আন্তঃনগর ট্রেনটি চালু করার কোন সম্ভবনা নেই। লালমনিরহাট রেলওয়ে স্টেশনে অনেক কোচ পড়ে আছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী চাইলে পূর্বাঞ্চল রেলওয়ে বিভাগ থেকে দুইটি লেকোমোটিভ এনে আপাতত পুরাতন কোচ দিয়েই ট্রেনটি চালু করা সম্ভব। পরবর্তীতে নতুন কোচ ও লেকোমোটিভ সংযোজন করা যেতে পারে।’

লালমনিরহাট জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাবেক প্রতিমন্ত্রী লেফটেন্যান্ট (অবঃ) মোতাহার হোসেন এমপি বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর একটি প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করতে রেলপথ মন্ত্রণালয় কালক্ষেপণ করছে। এই বিষয়ে রেলপথ মন্ত্রীকেসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের লালমনিরহাট নিয়ে আসা হয়েছিল। একটি নির্দেশনা দিলেই পুরাতন রেক দিয়ে হলেও তিন বিঘা করিডোর এক্সপ্রেস ট্রেনটির পরিচালনা শুরু করা যেত। কিন্তু তিনি কোনও পদক্ষেপ নিচ্ছেন না।’

এসএমএন