সাংবাদিক শামসুজ্জামান শামসের নিঃশর্ত মুক্তি ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবিতে মানববন্ধন

প্রথম আলোর সাংবাদিক শামসুজ্জামান শামসের নিঃশর্ত মুক্তি ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবিতে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে ধামরাইয়ের কর্মরত সাংবাদিকদের সংগঠন। এ সময় চাতক পাখির মতো কোথা থেকে যেন ছেলের মুক্তির জন্য ভারাক্রান্ত হৃদয়ে হাজির হন শামসের মা করিমন নেসা।
শনিবার (০১ এপ্রিল) দুপুরে উপজেলার সোমভাগ ইউনিয়নের ডাউটিয়া ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের পাশে এলাকাবাসী ও ধামরাই উপজেলা প্রেস ক্লাব এবং ধামরাই রিপোর্টার্স ক্লাবের আয়োজনে সাংবাদিক শামসের নিঃশর্ত মুক্তি ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবিতে মানববন্ধন করা হয়।
এ সময় সাংবাদিক শামসুজ্জামান শামসের মা করিমন নেসা, ধামরাই উপজেলা প্রেস ক্লাবের সভাপতি দৈনিক যুগান্তর পত্রিকার সাংবাদিক শামীম খান, রিপোর্টার্স ক্লাবের সভাপতি দৈনিক আমাদের নতুন সময় পত্রিকার সাংবাদিক আদনান হোসেন, রিপোর্টার্স ক্লাবের সহ-সভাপতি বাংলা টিভির সাংবাদিক হুমায়ুন রশিদ, ধামরাই উপজেলা প্রেস ক্লাবের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাসুদ রানা, উপজেলা প্রেস ক্লাবের সাংগঠনিক সম্পাদক দৈনিক কালবেলা পত্রিকার সাংবাদিক ইমরান খান, ধামরাই উপজেলা প্রেস ক্লাবের ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক দৈনিক জনকণ্ঠ পত্রিকার সাংবাদিক সোহেল রানা, মানবকণ্ঠ পত্রিকার সাংবাদিক আরিফুল ইসলাম সাব্বির, বাংলাদেশ সমাচার পত্রিকার সাংবাদিক সিরাজুল ইসলাম, দেশের কণ্ঠ পত্রিকার সাংবাদিক সম্রাট আলাউদ্দিন, সাংবাদিক সাইফুল ইসলাম সহ ধামরাই, সাভার ও আশুলিয়ার কর্মরত শতাধিক সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।
সাংবাদিক শামসুজ্জামান শামসের মা করিমন নেসা মানববন্ধনে কান্না জড়িত কণ্ঠে তার ছেলেকে বুকে ফিরে পাওয়ার আর্জি জানায়। শামসের মা'র আর্তচিৎকারে ধামরাইয়ের বাতাস ভারী হয়ে ওঠে। তার আহাজারিতে স্তব্ধ হয়ে যায় চারপাশ। করিমন নেসা কিছু সময়ের জন্য বাকরুদ্ধ হয়ে যায়। পরে তাকে বাড়ি নিয়ে যাওয়া হয়।
এ সময় সাংবাদিকরা বলেন, শামসুজ্জামান শামস শুধু একজন সাংবাদিক নয়। তিনি রাজধানীর হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার নিহত শহীদ ডিবি পুলিশের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এএসপি) রবিউল ইসলামের আপন ছোট ভাই।
শামসকে তুলে নেওয়ার সময় সাদা পোশাকে থাকা কয়েকজন দাবি করে প্রকাশিত প্রতিবেদনের জন্য রাষ্ট্রের আপত্তি আছে। এর তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে বলা হয়, যেই মায়ের পেটে রবিউল ইসলামের মত দেশপ্রেমিক পুলিশ কর্মকর্তার জন্ম হয় সেই মায়ের পেটে জন্ম নেওয়া শামসুজ্জামান কখনোই রাষ্ট্রবিরোধী হতে পারেন না। আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে আমাদের সহকর্মী শামসুজ্জামান শামসকে নিঃশর্ত মুক্তি দিয়ে দায়েরকৃত মামলা প্রত্যাহার সহ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবিও জানান।
উল্লেখ্য, গত ২৬ মার্চ প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনের জেরে গতকাল ভোর চারটার দিকে সাভারে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশের আমবাগান এলাকায় শামসুজ্জামানের বাসা থেকে সাদা পোশাক পরিহিত সিআইডি পরিচয়ে তাকে তুলে নিয়ে যায়। এ সময় তারা শামসুজ্জামানের বাসা থেকে তল্লাশি করে তাঁর ব্যবহৃত একটি ল্যাপটপ, দুটি মুঠোফোন ও একটি পোর্টেবল হার্ডডিস্ক নিয়ে যায়। পরে বৃহস্পতিবার দুপুরে রমনা থানার এক মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠায় পুলিশ। পরে বিজ্ঞ আদালত তার জামিন না মঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। শুক্রবার সকালে সাংবাদিক শামসুজ্জামান শামসকে সাড়ে দশটায় কেরানীগঞ্জ থেকে কাশিমপুর কারাগার-১-এ নেওয়া হয়েছে।