ঢাকা মঙ্গলবার, ২২শে এপ্রিল ২০২৫, ১০ই বৈশাখ ১৪৩২


গাইবান্ধা সদর উপজেলার বোয়ালী ইউনিয়নে সুদ ব্যবসায়ীদের ছোবল


৩১ মার্চ ২০২৩ ০২:৫৪

গাইবান্ধা জেলাসহ সদর উপজেলার বোয়ালী ইউনিয়নে সুদ ব্যবসায়ীদের ছোবলে জিম্মি ও অসহায় হয়ে পড়েছে এলাকার হত-দরিদ্র ও মধ্যবৃত্ত শ্রেনীর জনগোষ্ঠী।

সর্বত্রই বেড়ে চলছে রকমারি এ সুদের ব্যবসা। ভিন্ন মেয়াদি ও মহাজনী সুদের কারবারের ফলে রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।অন্যদিকে অসাধু সুদ ব্যবসায়ীরা বনে যাচ্ছে পাহাড় সমান কালো টাকার মালিক।

প্রায় শতাধিক ব্যক্তির অভিযোগ থেকে জানা যায়, মানুষকে নিঃস্ব করার অন্যতম সুদের ব্যবসা গাইবান্ধা সদর উপজেলার ৮নং বোয়ালী ইউনিয়নের সোনারপাড়া,ইন্দ্রাপাড়,গনউন্নয়ন,পুলবন্দি,তীরমোহনী,কাচাড়ি মোড়,জাহাঙ্গীরের মোড়,মিয়ার বাজার এলাকাসহ উপজেলার সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে। সুদ ব্যবসায়ীদের রোষানলে পড়ে অসহায় হয়ে পড়েছে সমাজের নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবারের সাধারণ মানুষগুলো।

এদিকে অসাধু সুদ ব্যাবসায়ীরা দৈনিক, সাপ্তাহিক ও মাসিক ভিত্তিতে সুদের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। অত্র এলাকায় সুদের ব্যবসা মহামারী আকার ধারণ করেছে। সুদের কারবারিরা বিভিন্ন লোন এমনকি অত্র এলাকার বিভিন্ন হাট-বাজার এর কতিপয় ব্যাবসায়ী সরকারি ব্যাংক ও এনজিও সংস্থা থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা লোন উত্তোলন করে সিন্ডিকেট এর মাধ্যমে চড়া সুদে হত-দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মাঝে ভিন্ন ভিন্ন মেয়াদে ঋন প্রদান করছেন। কিন্তু এদের ঋন দানের কোন সরকারি অনুমতি নেই।কোন এনজিওর সাথেও তাদের সংশ্লিষ্টতা খুজে পাওয়া যায়নি। কিন্তু দিনের পর দিন কোন বাঁধা বিপত্তি ছাড়াই চালিয়ে যাচ্ছে সুদের ব্যবসা।

বোয়ালী ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ডের সোনারপাড়া এলাকার বেশ কয়েকজন সুদ কারবারি নিরীহ লোকদের টার্গেট করে তাদের সর্বত্র হাতিয়ে নিচ্ছে। এদেরকে সাপোর্টকরে যাচ্ছে এলাকার অসাধু কতিপয় ব্যক্তি যারা এর বিনিময়ে কমিশন পায়।

জানা যায়,সুদ কারবারিরা সুদ গ্রহীতাদের টাকা দেওয়ার বিনিময়ে ১০০/৩০০ টাকার ফাঁকা ষ্ট্যাম্প, ব্যাংকের ব্লাঙক চেক স্বাক্ষর করা, বাড়ির মূল দলিল ইত্যাদি জমা নেওয়াসহ হোন্ডা, সোনাদানা জমা নেয়। পরবর্তীতে প্রতিমাসে সুদের কমিশন না দিতে পারলে ঘরের আসবাবপত্র নিয়ে যায়।এমনকি ভুক্তভোগীদের বিভিন্ন ধরনের হুমকি ধামকি দিয়ে পুলিশের কাছে ধরিয়ে দিবে বলেও হেনস্থা করে।

সুদের কারবারিদের নিকট থেকে কেউ ব্যবসা করতে, বিদেশগমনে, সিএনজি, অটোরিক্সা,রিক্সা ক্রয়ে বা বিভিন্ন অসুবিধায় সুদ ব্যবসায়ীদের নিকট চড়া সুদে টাকা নিয়ে ১০০/৩০০ টাকার সাদা ষ্ট্যাম্পে স্বাক্ষর, টিপ, ব্যাংকের একাউন্টের সই করা চেক জমা দিয়ে টাকা নিতে হয়। আর ওই সব সাদা ষ্ট্যাম্পে সাক্ষী নেওয়া হয় সুদ ব্যবসায়ীদের পছন্দমত ব্যক্তিদের এবং ইচ্ছামত তারা ষ্ট্যাম্প পূরণ করে রাখেন কিংবা প্রয়োজন মত লেখার জন্য ফাঁকা রাখেন। পরবর্তীতে সুদ কারবারিদের সুদের লভ্যাংশ না দিতে পারলে ভুক্তভোগীদের সর্বস্ব বিলিয়ে দিতে হয়।

মাসিক, সাপ্তাহিক এমনকি দৈনিক ভিত্তিতে নগদ ঋণ দিয়ে দেড় থেকে দুই গুন মুনাফা লাভ করে এসব সুদ কারবারিরা। একদিকে যেমন সুদ ব্যবসায়ীরা সম্পদের পাহাড় গড়ছেন অন্যদিকে সাধারণ ও মধ্যবিত্ত আয়ের মানুষ দিন দিন গরিব ও ভূমিহীনে পরিণত হচ্ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকেই জানান, সুদের ব্যবসা দিনের পর দিন বেড়েই চলছে। এই ব্যবসায় পুরুষের পাশাপাশি মহিলা সুদ ব্যবসায়ী ও আছে। সুদের টাকা পরিশোধ করতে না পারলে বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি দেখিয়ে সুদের টাকা আদায় করেন।এই ব্যবসার মাধ্যমে অনেকেই বিত্তহীন থেকে হয়েছেন বিত্তবান, টিনের ঘর থেকে দু’তলা বাড়ি পর্যন্ত বানিয়েছেন।

অথচ সুদ ব্যবসায়ীদের এমন কর্মকান্ডে প্রশাসনের নেই কোন পদক্ষেপ। যার ফলে ঋনের নামে এসব শোষণ বেড়েই চলছে। সমাজের এই ক্ষতিকর সমাজ-বিরোধী অবৈধ সুদ ব্যবসা উচ্ছেদে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও প্রশাসন এ ব্যাপারে জরুরী পদক্ষেপ নিবেন এই দাবী সচেতন মহলের।