ঢাকা বুধবার, ২৩শে এপ্রিল ২০২৫, ১১ই বৈশাখ ১৪৩২


গাছে বেঁধে রাজমিস্ত্রিকে অমানবিক নির্যাতন


১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ২২:৪৩

কুমিল্লার দেবিদ্বারে চুরির অপবাদ দিয়ে এক রাজমিস্ত্রিকে গভীর রাতে ঘর থেকে তুলে নিয়ে গাছের সঙ্গে বেঁধে পরিবারের লোকদের সামনে অমানবিক নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। নির্যাতনের সঙ্গে ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক মেম্বার ও তার লোকজন জড়িত বলে জানা গেছে।

গত বুধবার দিবাগত রাত ২টার দিকে উপজেলার ইউসুফপুর ইউনিয়নের পূর্ব নবীপুর গ্রামের বাহার উদ্দিন সরকার বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। গতকাল শুক্রবার (১০ ফেব্রুয়ারি) ঘটনাটি জানাজানি হয়।

ভুক্তভোগীর পরিবার ও স্থানীয়রা জানান, পূর্ব নবীপুর গ্রামের মৃত আব্দুল কাদেরের ছেলে মো. মামুন (৪০) রাজমিস্ত্রীর কাজ করেন। মোবাইল চুরির অপবাদ দিয়ে গত বুধবার দিবাগত রাত ২টার দিকে নিজ ঘর থেকে বশির মেম্বারের বাড়িতে তুলে যায়। কিছু লোকজন। সেখানে মামুনকে গাছের সঙ্গে বেঁধে রাত ভর শারীরিক নির্যাতন চলে। পরে গত বৃহস্পতিবার সারা দিন একটি ঘরে আটকে রেখে নির্যাতন চালানো হয় তার ওপর। মামুনের পরিবার অনেক আকুতি মিনতি করেও তাকে ছাড়িয়ে নিতে ব্যর্থ হয়। এমনকি ঘটনা পুলিশকে জানালে মামুনের পরিবারকে জীবননাশেরও হুমকি দেয় বশির মেম্বার ও তার লোকজন।

মামুনের পরিবার স্থানীয় ইউছুফপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাকারিয়া ম্যানেজারের নিকট বিচার প্রার্থী হন। বৃহস্পতিবার বিকেলে চেয়ারম্যানের বাড়িতে সালিশে ঘটনার মিমাংসা করে দেন। একই সঙ্গে আহত মামুনের চিকিৎসার জন্য বশির মেম্বারকে ১৫ হাজার টাকা জরিমানা করেন। পরে ইউপি চেয়ারম্যানের সহযোগিতায় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে মামুনকে তার স্বজনরা দেবিদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান।

ভুক্তভোগী মামুন বলেন, ‘আমি রাজমিস্ত্রি। রাতে খাওয়া দাওয়া করে ঘুমিয়ে পরি। মেবাইল চুরির ঘটনার বিষয়ে আমি কিছুই বলতে পারবো না। বুধবার রাত ২টার দিকে বশির মেম্বার, তার ছেলে রুবেল, মেহেদি এবং ভাতিজা শামীম, শরিফ ও তাদের অনুসারী ইয়াসিন ও রুবেলসহ কয়েকজন বাড়িতে এসে আমাকে চোর চোর বলে ডাকাডাকি শুরু করেন। আমি দরজা খুললে আমাকে টেনে ঘরে থেকে বাইরে নিয়ে যায়। বশির মেম্বারের বাড়িতে সারারাত আম গাছের সঙ্গে বেঁধে লাঠি ও পাইপ দিয়ে মারধর করে তারা আমাকে। সকাল হলে মেম্বারের বাড়ির একটি ঘরে নিয়ে বেঁধে আবারো নির্যাতন করেন। আমি মোবাইল চুরি করেছি তা স্বীকার করার জন্য জুয়েল প্লাস দিয়ে আমার পায়ের নখ তুলে নেয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘দেবিদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আমাকে পাঠান। রাত ১১টার দিকে আমাকে কুমিল্লা মেডিকেলে ভর্তি করা হয়।’

আহত মামুনের স্ত্রী রাবেয়া আক্তার বলেন, ‘আমার স্বামীকে ঘরে থেকে তুলে নিয়ে চোর অপবাদ দিয়ে মারধর করলো, মেম্বার সারারাত সারাদিন বেঁধে রাখলো, আমারা আইনের আশ্রয় নিতে চাইলে আমাদের মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছেন। আমরা গরিব বলে কি কোনো বিচার নেই। আমার স্বামীকে বিনাদোষে চুরির অপবাদে গাছের সঙ্গে বেঁধে বর্বর নির্যাতন চালায়, থানা পুলিশের আশ্রয় চাওয়া দূরের কথা, চিকিৎসা নিতেও দেয়নি। চেয়ারম্যানের সহযোগিতায় অনেক কষ্টে স্বামীকে হাসপাতাল এনেছি।’

অভিযুক্ত ইউছুফপুর ইউনিয়নের সাবেক মেম্বার বশিরের সঙ্গে বারবার মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

শুক্রবার দুপুরে ইউসুফপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাকারিয়া ম্যানেজারের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, ‘বৃহস্পতিবার (৯ ফেব্রয়ারি) বিকেলে গ্রামবাসীদের নিয়ে সালিশে বসে ঘটনাটি মিমাংসা করে দিয়েছি। মোবাইল চুরি হয়েছে সত্য, তবে মামুন মিয়া চুরি করেছে তার প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তাই বশির মেম্বারকে মামুনের চিকিৎসা খরচ হিসেবে ১৫ হাজার টাকা জরিমানা করেছি।’

দেবিদ্বার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) খাদেমুল বাহার বলেন, ‘এ বিষয়টি গত শুক্রবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও সাংবাদিকদের কাছ থেকে জেনেছি। ভুক্তভোগী বা তার পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো লিখিত অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেব।’