ঝিনাইদহে নির্বাচনী উত্তাপ

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন তারিখ ঘোষণা না হলেও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের পোস্টার, ব্যানার,ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে ঝিনাইদহ জেলা। নিজেদের প্রার্থী হিসেবে জানান দিতে তারা শহর থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে এসব ব্যানার, পোস্টার ফেস্টুন টানিয়েছেন।
ঈদ, পূজাসহ বিভিন্ন দিবসের শুভেচ্ছা জানিয়ে স্ব স্ব মনোনয়ন প্রত্যাশীদের নেতাকর্মীরা এসব পোস্টার টানিয়েছেন।
জেলার মধ্যে ঝিনাইদহ-৪ ( কালীগঞ্জ) আসনটি অধিক গুরুত্বপূর্ণ। গুরুত্বপূর্ণ এ আসনে আওয়ামী লীগ থেকে ৭ জন, বিএনপি থেকে ৪ জন মনোনয়ন প্রত্যাশা করেন। এদের প্রচার প্রচারণা ও পোস্টারে ছেয়ে গেছে সর্বত্র।
এছাড়া ওয়ার্কার্স পার্টি , জাতীয় পার্টি, এলডিপি থেকেও কয়েকজন মনোনয়ন চাইবেন বলেও এলাকাবাসী সুত্রে শোনা গেলেও জামায়াতের কোন খবর নেই। এসব দলের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের ব্যানার-পোস্টারও এলাকাবাসীর চোখে পড়েনি।
দলীয় একাধিক সূত্রে জানাগেছে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ থেকে ৭ জন মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন। এরা হচ্ছেন, বর্তমান এমপি ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুল আজীম আনার, সাবেক এমপি ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল মান্নান, উপজেলা চেয়ারম্যান ও প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা জাহাঙ্গীর সিদ্দিক ঠান্ডু, সাবেক মেয়র ও সাবেক ছাত্রলীগ সভাপতি এবং কেন্দ্রীয় যুবলীগ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান বিজু, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মতিয়ার রহমান মতি, সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ডাঃ রাশেদ শমসের ও কেন্দ্রীয় বাস্তুহারা লীগ সভাপতি আলহাজ তোফাজ্ঝেল বাবু।
মনোনয়ন নিয়ে আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি, সাবেক পৌর মেয়র ও বর্তমান এমপি’র দ্বন্দ্ব রয়েছে। বর্তমানে এসব মনোনয়ন প্রত্যাশী নেতাদের ব্যানার পোস্টারে এলাকা ছেয়ে গেছে।
অপরদিকে বিএনপির থেকে ৪ জন মনোনয়ন প্রত্যাশা করেন। এরা হচ্ছেন, সাবেক জাতীয় সংসদ সদস্য ও উপজেলা বিএনপির সভাপতি আলহাজ শহীদুজ্জামান বেল্টু, কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম ফিরোজ, উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক ও সাবেক ছাত্রদল নেতা হামিদুল ইসলাম হামিদ ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী হারুন অর রশীদ মোল্ল্যা। এসব নেতাকর্মীদের পোস্টার শোভা পাচ্ছে শহরসহ গ্রামাঞ্চলে।
বর্তমান এমপি ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুল আজীম আনার বলেন, আওয়ামী লীগ হচ্ছে পুরাতন ঐতিহ্যবাহী এশিয়া উপমহাদেশের অন্যতম দল। এ দলের অনেক অর্জন রয়েছে। বৃহৎ দলের রাজনীতি করেন তাদের সবার বিভিন্ন চাওয়া পাওয়া থাকতে পারে। তাদের অনেকেই মনোনয়ন প্রত্যাশা করতেই পারে। মনোনয়ন নিয়ে লবিং গ্রুপিংও থাকতে পারে। আমি ২০০৮ সালে মনোনয়ন পেয়েছিলাম কিন্তু মামলা জটিলতার কারনে সেটা পরিবর্তন হয়েছিল। ২০১৪ সালেও মনোনয়ন পেয়েছিলাম এবং জনগন ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছে।
তিনি বলেন, সামনে নির্বাচন আসছে, প্রার্থী হবো বলেই প্রচার প্রচারণা চালাতে হবে তা নয়। নির্বাচিত হবার পর থেকেই আমি পরবর্তী নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত রয়েছি। তখন থেকেই আমার সাংগঠনিক তৎপরতা চলছে। আমি বরাবরই সাংগঠনিকভাবে সব সময় শক্ত অবস্থানে আছি। নেতাকর্মীর সাথে আমার সকল সময় যোগাযোগ আছে। নেতাকর্মীদের দুঃখ বেদনায় আমি তাদের পাশে আছি। দলীয় নেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী আমাকেই নৌকা প্রতিক দিবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
সাবেক এমপি ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল মান্নান মনোনয়ন পাওয়ার আশা রেখে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের প্রকৃত ও ত্যাগী নেতাকর্মীরা তার সাথে আছেন। এছাড়া দলের ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাকর্মীসহ দলের অন্যান্য অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে বিভিন্ন সভা সমাবেশসহ নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।
তিনি আরো বলেন, ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যার পর থেকে যেসব নির্বাচন হয়েছে সেখানে ঝিনাইদহের ৪টি আসনই বিএনপির প্রার্থী নির্বাচিত হয়। এছাড়া আসনটি বিএনপির খাটি হিসেবে পরিচিতি পায়। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নেত্রী আমাকে মনোনয়ন দিলে আমি নৌকা প্রতিকের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হয়ে আসনটি উদ্ধার করে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে উপহার দিয়েছিলাম।
তিনি তার সময়ের বিভিন্ন উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে বলেন, সেই সব উন্নয়নের গতি অব্যাহত আছে। সাবেক এমপি এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে তার পক্ষে দলীয় নেতাকর্মীরা ব্যানার পোস্টার টানিয়ে শুভেচ্ছা ও মনোনয়ন প্রত্যাশা করতেই পারেন বলে তিনি জানান।
মনোনয়ন প্রত্যাশী কালীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা মো. জাহাঙ্গীর সিদ্দিক ঠান্ডু বলেন, তিনি দু’বার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। ১৯৮৫ সালে তিনি প্রথম উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়ে ১ হাজার ভোটে পরাজিত হন। এছাড়া ১৯৮৬ ও ১৯৯১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি ঝিনাইদহ-৪ আসনে মনোনয়ন পেয়েছিলেন। ১৯৮৬ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হন। সন্ত্রাস কবলিত এলাকা খ্যাত আন্ডার গ্রাউন্ড দলের লোকজন ভোট কেটে নিয়ে যায়। ভোট কাটার পরও তিনি মাত্র ১২০ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হন। ১৯৯০ সালে উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হই। এরপর দলীয় নেত্রী আমাকে ১৯৯১ সালে আওয়ামী লীগের প্রার্থী করেন।
তবে সেবার তিনি ৮ হাজার ভোটে হেরে যান। সর্বশেষ তিনি উপজেলা চেয়ারম্যানে প্রার্থী হয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান হয়েছেন। বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য আলহাজ শহীদুজ্জামান বেল্টুর মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় তার কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
তবে তার পক্ষে দলের উপজেলা সাধারণ সম্পাদক আইনাল হক বলেন, বিএনপি একটি বড় দল। বড় দলে দ্বন্দ্ব বা লবিং গ্রুপিং থাকতেই পারে। মূলত পদ পদবী নিয়ে এ গ্রুপিং সৃষ্টি হয়েছিল। কিন্তু জেলা সম্মেলন হওয়ার পর আহবায়ক কমিটি থাকে না। বিলুপ্তি হয়ে যায়।
তিনি জানান, আগামী নির্বাচনে বিএনপি থেকে সাবেক সংসদ সদস্য আলহাজ শহীদুজ্জামান বেল্টুই মনোনয়ন পাবেন এবং আসনটি পুনরুদ্ধার করবেন। বড় দল হিসেবে তাদের প্রচার প্রচার হিসেবে পোস্টার ব্যানার থাকতেই পারে।
এছাড়া দল যাকে মনোনয়ন দিবেন তার পক্ষেই নেতকর্মীরা থাকবেন বলেও তিনি জানান।
বিএনপিতে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন নতুন মুখ কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম ফিরোজ।
ছাত্রজীবনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সংসদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালনকারী এ নেতা জানান, তিনি কোনো গ্রুপিংয়ে নেই। দেশনেত্রী
খালেদা জিয়া যদি তাকে মনোনয়ন দেন, তা হলে তিনি নির্বাচিত হয়ে এলাকার মানুষের প্রত্যাশা পূরণে সচেষ্ট থাকবেন। যার কারণে তার সমর্থিত নেতাকর্মীরা শহরে পোস্টার ব্যানার টানিয়েছেন।
একেএ