ঢাকা সোমবার, ২১শে এপ্রিল ২০২৫, ৯ই বৈশাখ ১৪৩২


মাথা মায়ের পেটে ছিঁড়ে আসা অংশ ডাস্টবিনে


২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ২১:৫৮

নিষ্ঠুর, হৃদয়বিদারক, মর্মান্তিক ! ব্যাথা বোঝানোর ভাষা নেই। কোনো বিশেষণই যেন এ ঘটনা প্রকাশ করার জন্য যথার্থ নয়।

প্রসব করানোর সময় টেনেহিঁচড়ে নবজাতকের হাত-পাসহ দেহের অর্ধেকাংশ ছিঁড়ে ফেলেছেন দুই নার্স ও এক আয়া। মাথা রয়ে গেছে মায়ের পেটেই।

হৃদয়বিদারক এ ঘটনা ঘটেছে কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। ঘটনা ধামাচাপা দিতে হাসপাতালের পরিত্যক্ত ডাস্টবিনে ফেলে দেওয়া হয়েছে নবজাতকের ছেঁড়া হাত ও দেহ।

পরে হাসপাতালের চিকিৎসক অস্ত্রোপচার করে গত রোববার ওই প্রসূতির গর্ভ থেকে সন্তানের মাথার অংশ বের করে আনেন। প্রসূতির অবস্থা এখনো আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক।

জানা গেছে, দেবিদ্বারের ফতেহাবাদ ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুর গ্রামের সেলিম মিয়ার স্ত্রী ফাতেমা বেগম সন্তান প্রসবের জন্য শনিবার ৩টার দিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডা. নীলা পারভীনের তত্ত্বাবাবধানে হাসপাতালে ভর্তি হন।

ফাতেমার স্বামী সেলিম মিয়া  জানান, প্রসব বেদনা থাকলেও কোনো চিকিৎসক সন্তান প্রসবের উদ্যোগ নেননি। হাসপাতালের নার্স আছিয়া ও ঝরনা রোগীর স্বজনদের দিয়ে সন্তান প্রসবের জন্য ওষুধপত্র ক্রয় করালেও সময়মতো ব্যবস্থা নেন নি।

পরে রাত সাড়ে ১১টার দিকে নার্স ও ডলি নামের এক আয়া মিলে ফাতেমার গর্ভের সন্তানের পা এবং হাত ধরে টানাটানি শুরু করেন। তাদের টানহ্যাঁচড়ায় নবজাতকের হাত-পাসহ অর্ধেকাংশ ছিঁড়ে বেরিয়ে আসে। আর মাথা থেকে যায় প্রসূতির পেটে। এ অবস্থায় প্রসূতির জীবন সংকটাপন্ন হলে গভীর রাতে প্রসূতিকে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

এ ঘটনা ধামাচাপা দিতে নবজাতকের ছেঁড়া হাত ও দেহ হাসপাতালের পরিত্যক্ত ডাস্টবিনে ফেলে দেওয়া হয়। সকালে ওই সরকারি হাসপাতালের পেছনে হাত পড়ে থাকতে দেখেন পথচারীরা। এর পরই বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর এ ঘটনা।

দেবিদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আহম্মেদ কবীর জানান, দায়িত্বশীল মেডিক্যাল অফিসার আহসানুল হক মিলু ও ডা. নীলা পারভীনকে না জানিয়ে রাতে সিনিয়র স্টাফ নার্স আছিয়া, ঝরনা ও এক আয়া মিলে প্রসূতির গর্ভের সন্তান ডেলিভারির চেষ্টা করালে এ ঘটনা ঘটে।

তিনি জানান, এ ঘটনার তদন্তের জন্য দেবিদ্বার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের গাইনি বিভাগের জুনিয়র কনসালট্যান্ট ডা. তামান্না সোলেমানকে প্রধান করে ৩ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে কুমিল্লার সিভিল সার্জন ডা. মুজিবুর রহমান জানান, দেবিদ্বার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে একটি নবজাতকের মৃত্যুর বিষয়ে আমার কাছে যে তথ্য এসেছে তাতে আমি খুবই মর্মাহত।

এসএমএন