যশোর-৪ আসনের এমপির বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ

যশোর-৪ আসনের এমপি রনজিৎ কুমার রায়ের বিরুদ্ধে ঢাকায় সংবাদ সম্মেলন করেছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা। তারা বলেছেন, তিনি একচেটিয়াভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে সকল ক্ষেত্রে অর্থ-বাণিজ্যসহ অনিয়ম আর দুর্নীতি করে যাচ্ছেন।
রোববার (২৩ সেপ্টেম্বর) দুপুর ২টায় ঢাকা রিপোর্টাস ইউনিটির ক্রাইম রিপোর্টাস এসোসিয়েশনে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য উপস্থাপন করা হয়।
এ সময় নেতারা বলেন, এমপি রনজিৎ কুমার রায়কে বাদ দিয়ে যে কোন প্রার্থীকে নিয়েই আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে তার ভোট করবো। কিন্তু যদি এমপিকে মনোনয়ন দেওয়া হয়। তাহলে বাঘারপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ আর ঐক্যবদ্ধ থাকবে না। তাই কেন্দ্রের প্রতি আমাদের আহবান এবার যেন তাকে মনোনয়ন না দেয়া হয়।
এ সময় লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন দহাখোলা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মোতালেব তরফদার। তিনি রণজিৎ কুমার রায়ের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ২০০৮ সালের আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচনে জয়লাভের পর থেকে তিনি টাকার নেশায় মগ্ন হয়ে পড়েন। স্থানীয় আওয়ামী লীগের পোড় খাওয়া নেতা এবং মুরুব্বীরা তার থেকে সড়ে দাঁড়ায়।
তিনি বলেন, এছাড়াও দলীয় কমিটি এবং বিভিন্ন সামাজিক প্রতিষ্ঠানে অন্তত দেড় কোটি টাকার বিনিময়ে অযোগ্য অদক্ষ লোক বসিয়ে প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে যা বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।
অভিযোগে বলা হয়, ‘২০০৪ সালে বাঘারপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটিতে সভাপতি নির্বাচিত হবার পর থেকেই নিজেস্ব লোক দিয়ে পকেট কমিটি বানিয়ে রেখে আজ পর্যন্ত কোন বর্ধিত সভা করারও প্রয়োজন মনে করেন নি। কেন্দ্রের নির্দেশ উপেক্ষা করে দলের কর্মকান্ডকে গতিশীল করতে বাঘারপাড়া উপজেলা আওয়ামীলীগের কমিটি গঠন না করার জন্য যা যা করার তাই করেছেন। তার মতের বিরুদ্ধে গেলেই তাকে হামলা-মামলা দিয়ে নির্যাতিত করার অনেক প্রমাণ মিলবে আমাদের নির্বাচনী এলাকায়। অভয়নগর উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা মোল্যা ওলিয়ারের হত্যার পিছিনে তার মদদ আছে মর্মে গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে এসেছে।
সংবাদ সম্মেলনে চেয়ারম্যান মোতালেব তরফদার বলেন, টাকার বিনিময়ে জামাত বিএনপি দলীয় লোক নিয়োগ দেয়া তার অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। যেখানে উপজেলা সদরের সবচেয়ে প্রাচীন প্রতিষ্ঠান বাঘারপাড়া ডিগ্রী কলেজের বর্তমান অধ্যক্ষ হিসেবে ২২ লক্ষ টাকার বিনিময়ে নিয়োগ দিয়েছেন উপজেলা জামায়াতের রোকন আব্দুল মতিনকে। হাবুল্ল্যা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে ১২ লক্ষ টাকার বিনিময়ে নিয়োগ দিয়েছেন উপজেলা ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আজিজুর রহমানকে। রায়পুর কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে ১৫ লক্ষ টাকার বিনিময়ে নিয়োগ দিয়েছেন ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামানকে। ধলগ্রাম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসাবে ১২ লক্ষ টাকার বিনিময়ে নিয়োগ দিয়েছেন ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম-সাধারন সম্পাদক মাহফুজুর রহমানকে। আগড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে ১২ লক্ষ টাকার বিনিময়ে নিয়োগ দিয়েছেন বিএনপি নেতা হুমায়ন কবিরকে। ছাতিয়ানতলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে ১৫ লক্ষ টাকার বিনিময়ে নিয়োগ দিয়েছেন ফতেপুর ইউনিয়ন বিএনপির সহ-সভাপতি শহীদুলকে।
তিনি আরো বলেন, এছাড়া অভয়নগর উপজেলা জামাতের আমীর মাওঃ আঃ আজিজের কন্যা মহাছিনা খাতুনকে ২২ লক্ষ টাকার বিনিময়ে বাঘারপাড়া উপজেলা খাজুরা ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার নিয়োগ দিয়েছেন। এছাড়া আমীর সাহেবের আপন ভাই আঃ হকের কন্যা নাঈমা আক্তার কে চেঙ্গুটিয়া বি সি সি মুজাদিয়া মাদ্রাসার শিক্ষক হিসাবে ১৭ লক্ষ টাকার বিনিময়ে নিয়োগ দিয়েছেন। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নৈশ-প্রহরীর নিয়োগে দুই উপজেলা থেকে কয়েক কোটি টাকার লেনদেন করেছেন। আওয়ামী লীগের কর্মী হয়েও সাত-আট লাখ টাকা দিয়ে এই চাকুরী নিতে হয়েছে। এমন শত শত নাম আপনাদেরকে বলতে পারব যেসকল নিয়োগের পিছনে আছে মোটা অংকের টাকার লেনদেন।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, রণজিৎ কুমার রায় ২০০৮ সালে জাতীয় সংসদ নিরবাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান-তখন তিনি নির্বাচনী হলফনামায় স্থাবর ও আস্থাবর সম্পদের বিবরণ প্রদান করেন। তখন সেই বিবরণে পৈত্রিক ৪ বিঘা কৃষি জমি, ৪ শতক জমির উপর তেলিধান পূজা মৌজায় একটি টিনের ঘর,ছেলে ও স্ত্রী নামে ব্যাংক ব্যালেন্স ও জমি নাই। এখন ১০ বৎসর তিনি এমপি নির্বাচিত হয়ে কিভাবে আকাশ ছোয়া সম্পদের মালিক হলেন।
তিনি বলেন, তার নামে যশোর রেল রোডে ৫ তলা একটি ও ৩ তলা একটি, যশোর লোহাপট্টিতে ১ টি, যশোর নিউ মার্কেটে ২ টি, বাঘারপাড়া উপজেলাতে ২য় তলা ১ টি, খাজুরা বাজারে ৪ তলা ১ টি, ঢাকায় মিরপুর দারুস সালাম রোডে ২ টি বাড়ি, ছেলেদের নামে-ভারতে সল্ট লেগে ও বাড়াসাতে ২ টি বাড়ি, বাঘারপাড়া ও চৌগাছার উপজেলায় ২২৫ একর জমি ক্রয় করেছেন , খুলনা জেলার ডুমুরিয়া উপজেলার ৫০ একর জমির উপর মৎস্য ঘের ক্রয় করেছেন। নিজে পাজেরো গাড়িতে চড়েন মূল্য ১ কোটি টাকা, দুই ছেলে ২টা গাড়ির মূল্য ৬০ লক্ষ টাকা, স্ত্রী ১ টি গাড়িতে চড়েন মূল্য ৩০ লক্ষ টাকা, স্ত্রীর নামে ট্রাক কাভারভ্যান ১০টি আছে যার মূল্য ৫ কোটি টাকা।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বাঘারপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি আতিয়ার রহমান সরদার, সাধারণ সম্পাদক জুলফিকার আলী, যশোর জেলা আওয়ামী লীগ সদস্য আজগর আলী, ১নং ইউনিয়নের চেয়রম্যান দিল পাটুয়ারী, বাসুয়ারি ইউপি চেয়ারম্যান আবু সাঈদ সরদার, জামদিয়া ইউপি চেয়ারম্যান কামরুল ইসলাম টুটুল, বন্দোবিলা ইউপি চেয়ারম্যান সবদুল হোসেন খান, বাঘার পাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আ: রউফ মোল্যা, বাঘারপাড়া যুবলীগের সাবেক নেতা নজরুল ইসলাম, সাবেক চেয়ারম্যান জাকির হোসেন, সাইফুজ্জামান ভোলা, মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল আজিজ, বাবলু কুমার সাহা, ইমদাদ হোসেন, বাঘারপাড়া উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি বায়োজিদ হোসেন, সাধারণ সম্পাদক বিএম শাহাজালালা, দরাজ হাটের জালালা উদ্দীন, বাঘারপাড়া ছাত্রলীগের সাবেক নেতা প্রমুখ।
একেএ