বেনাপোলে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ

আমদানি পণ্য খালাসে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগে ভারতের পেট্রাপোল বন্দর ব্যবহারকারী ব্যবসায়ীদের ডাকা ধমর্ঘটে বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য বন্ধ রয়েছে।
শনিবার (২২ সেপ্টেম্বর) বেলা ১টার দিকে ভারতের পেট্রাপোল বন্দরের ব্যবসায়ীরা পণ্য প্রবেশ বন্ধ করে ধর্মঘটের ডাক দেন।
বেনাপোল চেকপোস্ট সূত্রে জানা গেছে, পেট্রাপোল বন্দরের কিছু ট্রাক মালিক ও শ্রমিক নেতারা পরিকল্পিতভাবে ইতিপূর্বে বেনাপোলে পণ্যজট দেখিয়ে একটি সিন্ডিকেট করে ট্রাকের ডেমারেজ বাবদ প্রতিদিন এক হাজার থেকে ১৫শ টাকা বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে আদায় করে নিতো। এর ফলে এক একটি ট্রাক পণ্য নিয়ে বেনাপোল বন্দরে পৌঁছাতে সময় লাগতো ১৫ থেকে ২০ দিন।
বর্তমানে বেনাপোল বন্দরে কোনো পণ্যজট না থাকায় প্রতিদিনের ট্রাক প্রতিদিন প্রবেশ করছে। সে কারণে ভারতীয় ট্রাক মালিক ও শ্রমিকরা কোনো ডেমারেজ পাচ্ছে না। এর ফলে আবারো নানাভাবে তুচ্ছ ঘটনায় তারা আমদানি-রপ্তানি বন্ধ করার পায়তারা চালাচ্ছে। যাতে বন্ধ রেখে ডেমারেজ আদায় করা যায়।
পেট্রাপোল বন্দর সূত্রে জানা গেছে, গত সপ্তাহে বাণিজ্যিক বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে ভারতের পেট্রাপোল বন্দরে দুই দেশের ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদের মধ্যে বৈঠক হয়। সেখানে আমদানি পণ্য খালাসসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহনশীল পর্যায়ে লেনদেনে উভয়পক্ষের মধ্যে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। কিন্তু পরবর্তী সময়ে বেনাপোল বন্দরের সিঅ্যান্ডএফ কর্মচারীরা ওই সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে ট্রাকচালকদের কাছ থেকে আবারও অতিরিক্ত অর্থ আদায় করতে থাকে বলে তাদের অভিযোগ।
এতে ভারতীয় ব্যবসায়ী ও ট্রাক শ্রমিকনেতারা প্রতিবাদ জানিয়ে এ পথে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ করে দেন। বেনাপোলের বিপরীতে পেট্রাপোল বন্দরে মাইক লাগিয়ে তারা সমাবেশও করেন।
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দীন বলেন, আমদানি পণ্য খালাসে তারা নিয়ম মেনেই ভারতীয় প্রতিনিধিদের কাছ থেকে খরচের টাকা নিয়ে থাকেন। বেশি আদায়ের অভিযোগ ভিত্তিহীন। পরিকল্পিতভাবে তারা নানাভাবে আমদানি-রপ্তানি ব্যাহত করতে এসব সমস্যা সৃষ্টি করছে।
বেনাপোল কাস্টমস কার্গো শাখার সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা অলি উল্লাহ জানান, সকাল থেকে স্বাভাবিক বাণিজ্য চলছিল। বেলা ১টার দিকে তা বন্ধ হয়ে যায়। লোকমুখে শুনেছি, পণ্য খালাসে লেনদেন নিয়ে ভারত থেকে কোনো পণ্যবাহী ট্রাক বেনাপোল বন্দরে ঢুকছে না। পেট্রাপোল বন্দর কর্তৃপক্ষ পণ্য দিলে তারা গ্রহণে প্রস্তুত রয়েছেন।
বেনাপোল আমদানি-রপ্তানি সমিতির সহ-সভাপতি আমিনুল হক বলেন, এ পথে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য বন্ধ থাকায় বেনাপোল ও পেট্রাপোল দুই বন্দরে প্রবেশের অপেক্ষায় আটকা রয়েছে পণ্যবাহী ট্রাকগুলো। এর মধ্যে মেশিনারি, গার্মেন্টস সামগ্রীর কাঁচামালের পাশাপাশি মাছ, পানসহ বিভিন্ন ধরনের পচনশীল পণ্যও রয়েছে। বিষয়টি দ্রুত সমাধান না করলে ব্যবসায়ীদের অর্থনৈতিক ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।
বেনাপোল স্থলবন্দরের পরিচালক (ট্রাফিক) আমিনুল ইসলাম জানান, আমদানি-রপ্তানি বন্ধ থাকলেও বেনাপোল বন্দর অভ্যন্তরে পণ্য ওঠানামা স্বাভাবিক রয়েছে। বাণিজ্য সচল করতে দুই পক্ষের সঙ্গে আলোচনা চলছে।
উল্লেখ্য, যোগোযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়ায় এ পথে ব্যবসায়ীদের বাণিজ্যে আগ্রহ বেশি। সপ্তাহে শুক্রবার ছাড়া অন্য ছয় দিন বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে ২৪ ঘণ্টা আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য চলে। প্রায় ২০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান এই বন্দরে। প্রতি বছর এ বন্দর থেকে সরকার প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আয় করে থাকে।
একেএ