ঢাকা বুধবার, ২রা এপ্রিল ২০২৫, ২০শে চৈত্র ১৪৩১


পাটের ফলনে বিপর্যয় : এবারও ঘরে উঠবে না কৃষকদের সোনালী স্বপ্ন


৩০ জুলাই ২০২৪ ১২:২৪

ফাইল ফটো

প্রতিবছর অন্তত ২৫ হাজার হেক্টর জমিতে সোনালী আঁশ পাট আবাদ করেন ফরিদপুরের সালথা ও নগরকান্দা উপজেলার ১৮টি ইউনিয়নের প্রান্তিক কৃষকরা। যে কারণে পাটচাষে বিখ্যাত এই দুটি উপজেলা। বাণিজ্যিকভাবে পাট উৎপাদন করেই এখানকার কৃষকরা স্বাবলম্বী। তবে গেল কয়েক বছর ধরে ভালো নেই পাটচাষিরা।

 
শতচেষ্টা করেও পাটচাষে সুদিন ফেরাতে পারছেন না তারা।

 

গত দুই বছর বর্ষার পানির অভাবে পাট জাগ দিতে পারেনি কৃষকরা। এবার বৃষ্টির পানির অভাবে ও তীব্র দাবদাহের কারণে পাট গাছের বাড়ন্ত কম হয়েছে। তাই বিগত বছরগুলোয় পাটচাষ করে ধরা খাওয়া কৃষকরা এবারও উৎপাদন খরচ ঘরে তুলতে পারবেন না বলে জানিয়েছেন।

 
এমন অবস্থায় পাটচাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়া ছাড়া কোনো বিকল্প খুঁজে পাচ্ছেন না তারা। তবে কৃষকদের দাবি, এবার পাটের ভালো দাম পেলে তারা এর চাষ করে টিকে থাকতে পারবেন। আর যদি দাম কম পায়, তাহলে পথে বসে যেতে হবে তাদের।

 

সালথা উপজেলা গট্টি ইউনিয়নের সিংহপ্রতাপ গ্রামের পাটচাষি মোহাম্মাদ হোসেল মাহমুদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘গত দুই বছর বর্ষার পানির অভাবে ঠিকমতো পাট জাগ দেওয়া যায়নি।

 
মাটি খুড়ে পাট জাগ দিতে গিয়ে পাটের রঙ হারিয়েছি। ফলে রঙ হারানো পাট বাজারে নিয়ে অর্ধেক দামে বিক্রি করেছি। এবার বৃষ্টির পানির অভাবে পাটের গাছ বেশি বড় হয়নি। যে কারণে ফলনে বিপর্যয় ঘটেছে।’

 

তিনি আরো বলেন, ‘গত বছর প্রতিবিঘা জমিতে ১৭ থেকে ১৮ মণ পাট পেয়েছি।

 
এবার আমি ৮ বিঘা জমিতে পাট আবাদ করেছি। ইতিমধ্যে পাট কাটা ও আঁশ ছাড়ানো শুরু করেছি। তাতে হিসেব করে দেখেছি এবার অর্ধেক ফলনও পাব না। প্রতিবিঘায় ৭ থেকে ৮ মণ পাট পেতে পারি। বর্তমানে বাজারে পাটের যে দাম তাতে উৎপাদন খরচও ঘরে তুলতে পারব না। তবে পাটের দাম বাড়লে উৎপাদন খরচ কিছুটা পুষিয়ে নিতে পারব।’

 

নগরকান্দার ছাগলদী গ্রামের পাটচাষি আমজেদ মাতুব্বর কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘পাটের ভরা মৌসুমে বৃষ্টির দেখা পায়নি। এমনকি গভীর নলকূপেও পানি না পাওয়ায় স্যালোমেশিন দিয়ে ঠিকমতো সেচ দিতে পারিনি। এমন অবস্থায় পাটের গাছ বেড়ে ওঠেনি। আর এখন বড় হওয়ার সুযোগও নেই। তাই পাট কেটে ফেলেছি। তবে ফলন একদমই ভালো হয়নি।’

তিনি আরো বলেন, ‘স্যার-ওষুধের দাম বেড়েছে। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত একজন শ্রমিকের দাম দিতে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা করে। সব কিছুর দাম বাড়লেও উৎপাদিত পাটের দাম বাড়ছে না। সব মিলিয়ে একবিঘা জমিতে এবার ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। কিন্তু প্রতিবিঘায় পাট পেয়েছি মাত্র ১০ থেকে ১২ মণ। বাজারে মানভেদে প্রতিমণ পাট বিক্রি হচ্ছে ২৫০০ থেকে ৩ হাজার টাকা। তাতে আমাদের উৎপাদন খরচও উঠবে না। তবে দাম বাড়লে আমরা বেঁচে থাকতে পারব।’

সালথার রঘুয়ারকান্দী গ্রামের কৃষক আয়ুইব মোল্যা কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘যারা নিজেরা কষ্ট করে পাটচাষ করেছে, তারা হয়তো উৎপাদন খরচ ঘরে তুলতে পারবে। আর যারা জমি লিজ বা বর্গা নিয়ে শ্রমিক দিয়ে কাজ করিয়ে পাটচাষ করছেন, প্রতিবিঘায় তাদের অন্তত ৫ হাজার টাকা লোকসান হবে। কারণ এবার একবিঘা জমির পাট কাটতে শ্রমিকদের ৮ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা দিতে হয়েছে। আবার একবিঘা জমির পাটের আঁশ ছাড়াতে আরও অন্তত ৭ হাজার থেকে ৮ হাজার শ্রমিকের বিল দিতে হচ্ছে। এবার যে ফলন হয়েছে, তাতে শুধু পাট কাটা ও আঁশ ছাড়াতে যে টাকা খরচ হচ্ছে, তাও উঠবে না।’

সালথা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুদর্শন শিকদার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সালথায় এবার ১৩ হাজার জমিতে পাট আবাদ হয়েছে। নিচু জমিগুলোতে পানি চলে আসায় পাট কাটতে শুরু করেছে কৃষকরা। আগাম পাট কাটায় ফলন অনেকটা কম পাওয়া যাচ্ছে। আরো কয়েক দিন পর পাটগুলো কাটলে ভালো ফলন পাওয়ার সম্ভাবনা ছিল।’

নগরকান্দা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তিলোক কুমার ঘোস কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘নগরকান্দায় এ বছর ১১ হাজার ৪৩৬ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে। বপণকালে খরা এবং সময়মত বৃষ্টিপাত না হওয়াতে পাটের বৃদ্ধি আশানুরূপ হয়নি। বর্তমানে পর্যাপ্ত বৃষ্টি হচ্ছে এবং খালে-বিলে পানি রয়েছে। ইতিমধ্যে ৭০ শতাংশ পাট কর্তন হয়েছে এবং জাগ দেওয়া চলছে। গুনগত মানের আঁশ উৎপাদনে করতে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। পাটের ভালো দাম পেলে ফলনের বিষয়টি কৃষকদের পুষিয়ে যাবে।’