ঢাকা বৃহঃস্পতিবার, ২৮শে মার্চ ২০২৪, ১৫ই চৈত্র ১৪৩০


শীতের শুরুতেই রস সংগ্রহে ব্যস্ত গাছিরা


২৫ অক্টোবর ২০১৮ ২১:৪০

আসন্ন শীত মৌসুমকে কেন্দ্র করে রাজশাহীতে শুরু হয়েছে খেজুরের রস সংগ্রহের প্রস্তুতি। গৌরব আর ঐতিহ্যের প্রতীক মধু বৃক্ষ এই খেজুর গাছ। এখনো শীতের তীব্রতা তেমন দেখা না মিললেও এর মধ্যে সীমিত পরিমাণে রস সংগ্রহ শুরু করেছেন রাজশাহী অঞ্চলের গাছিরা। তবে নভেম্বর মাসের মাঝামাঝি থেকে শুরু হয়ে যাবে রস সংগ্রহের ভরা মৌসুম।

গ্রামীণ জনপদের আসন্ন নবান্ন উৎসবের অপরিহার্য উপাদান খেজুরের রস আর গুড়। তাই শীতের শুরুতেই খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহে ব্যস্ত গাছিরা। শীত মানেই যেন খেজুর রস। শীতের সকালে নানাভাবে খাওয়া হয় এ রস। রাজশাহী অঞ্চলের পুঠিয়া, দূর্গাপুর, চারঘাট, বাঘা ও আশপাশের এলাকার গাছিরা এখন ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহের জন্য। রাজশাহীর বিভিন্ন উপজেলার কাঁচা ও পাকা সড়ক পথ, রেল লাইনের দুই ধার, জমির আইল, বাড়ির আঙ্গিনাসহ বিভিন্ন পতিত জায়গায় ছড়িয়ে আছে কয়েক লাখ খেজুর গাছ।

গবেষকদের দেওয়া তথ্যমতে, দেশের চিনির চাহিদার চার ভাগের এক ভাগ পূরণ হয় এই খেজুরের গুড় থেকে। জলবায়ুর পরির্তনের ফলে বৃষ্টিপাত পরিমাণ মতো না হওয়ায় এখন প্রতিবছরই কমছে খেজুরের রস। রসের উৎপাদন এভাবে কমতে থাকলে ভবিষ্যতে দেশে চিনি ও গুড় সংকট আরো বেড়ে যাবে বলে আশংকা করা হচ্ছে।

গাছিরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তন এবং বৃষ্টিপাত কমে যাওয়ায় কয়েক বছর ধরে কমছে খেজুরের রস। ফলে গুড়ের উৎপাদনও কমে যাচ্ছে। দূর্গাপুর উপজেলার গাছি হাবিল উদ্দিন জানান, বছরে এই ছয়টি মাস খুব পরিশ্রম করতে হয় আমাদের। খুব ব্যস্ত সময় পার করছি খেজুর গাছের পেছনে। শীত মাত্র শুরু হলো তাই গাছে খুব বেশি রস হচ্ছে না। তবুও গাছের রস সংগ্রহ করতে যেতে হচ্ছে কষ্ট করে। শীত যত বেশি হয় রসও শীতের সাথে সাথে বেশি হয়।

তিনি আরও বলেন, গাছে রস নেই, গাছে রস সংগ্রহ করে খুব একটা লাভ হয় না। খেজুরের জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার হয় গাছ গাছালির শুকনা ডালপালা। সেই খড়ির দাম অনেক বেশি রস জ্বাল করে খুব একটা পোষায় না। গুড়ের দাম ৭০-৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে বর্তমানে। কিন্তু সে তুলনায় অধিকাংশ টাকা ব্যায় হয়ে যায় রস জ্বাল করার লাকড়ীর পেছনেই।

পুঠিয়া উপজেলার আরেক গাছি, কলিমুদ্দিন বলেন, প্রতিবছর ১০০টি খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করি।প্রতিবছরই ভালো রস নামে গাছ থেকে। কিন্তু এ বছর এখনো শীত ভালো পড়েনি বলে গাছ থেকে খুব একটা রস নামছে না। আশা করা হচ্ছে, আগামী ১০-১৫ দিন পর থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণে রস পাওয়া যাবে খেজুর গাছ থেকে। চারঘাট উপজেলার মাড়িয়া গ্রামের গাছি জমসেদ জানান, এবারও প্রতি বছরের মতো ১শ’ খেজুরের গাছ রস সংগ্রহর জন্য প্রস্তুত করেছি। আগের বছরের চেয়ে গুড়ের বাজার ভালো থাকলে লাভবান হবে বলে আশাবাদ।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, শুধু রাজশাহী জেলাতেই রয়েছে প্রায় ৮ লাখ খেজুর গাছ। এসব গাছ থেকে উৎপাদিত গুড়ের সবচেয়ে বড় বাজার বসে পুঠিয়ার ঝলমলিয়া ও বানেশ্বর হাটে। পুঠিয়া, বাঘা, চারঘাটে সবচেয়ে বেশি খেজুর গুড় হয়। এ ছাড়াও জেলার দুর্গাপুর, বাগমারা, পবা, গোদাগাড়ী ও তানোর এলাকায় গুড় উৎপাদন হয়। যা শীতকালে এ অঞ্চলের অর্থনীতিতে বড় ধরনের ভূমিকা রাখে।
আজহারুল ইসলাস বুলবুল।

এমএ