ঢাকা শুক্রবার, ২৯শে মার্চ ২০২৪, ১৫ই চৈত্র ১৪৩০


বরেন্দ্র অঞ্চলে কৃষি উন্নয়নে আদিবাসী নারী শ্রমিকদের গুরুত্বপূর্ণ অবদান


৩ আগস্ট ২০২১ ০১:২৩

ফাইল ছবি

বাংলাদেশের জনসংখ্যার এক বিশাল অংশ নারী। নারী উন্নয়ন তাই জাতীয় উন্নয়নের পূর্বশর্ত। সকল ক্ষেত্রে নারীর সমসুযোগ ও সমঅধিকার প্রতিষ্ঠা জাতীয় উন্নয়ন নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে একান্ত অপরিহার্য। নারীরা গৃহস্থালী কাজের বাহিরেও কৃষিতে অগ্রদূত হিসেবে ভূমিকা রেখে চলেছেন। নারী আমাদের কৃষি সমাজ সংসারকে মহিমান্বিত করে, কষ্টগাঁথা আমাদের সমাজের প্রতিটি স্তরে নারীদের অবদান লক্ষ্যনীয়।

বিশেষ করে বরেন্দ্র অঞ্চলে কৃষি উন্নয়নে আদিবাসী নারীদের অবদান গুরুত্বপূর্ণ । বরেন্দ্র অঞ্চলের তানোর, গোদাগাড়ী, মোহনপুর, নাচোল ও নিয়ামতপুর, ধামইড়হাট, গোমস্তাপুর এবং মহাদেবপুর উপজেলাসহ এ এলাকায় বসবাসকারী প্রায় ২৯-৩১ হাজারের বেশি আদিবাসী নারী কৃষি কাজে অগ্রণী ভূমিকা রাখছে। এরা বেশির ভাগ আদিবাসি নারী অন্যের জমিতে কৃষি শ্রমিক হিসেবে কাজ করে থাকে। এই নারীরা কাজে পুরুষের সমপরিমান কাজ করলেও মজুরি বৈষম্যের শিকার হয়ে থাকে। আদিবাসী নারী শ্রমিকরা বলেন, আদিকাল হতে বংশ পরম্পরায় আমরা কৃষিকাজ করে আসছে। এবং কৃষিকাজই তাদের প্রধান পেশা হিসেবে যুগ যুগ চলে আসছে।

কিন্তু বরেন্দ্র অঞ্চলে কৃষি উন্নয়নে আদিবাসী নারীদের অবদান ও ভালো কাজ করলেও পুরুষদের তুলনায় নারী শ্রমিকরা কম মজুরি কম পান। একজন ৫০০ টাকা হলেও শ্রম সমান করেও নারী শ্রমিকরা পান ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা। রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলার কেশরহাট পৌরসভার রায়ঘাটি আদিবাস পাড়ার নারী শ্রমিক ভারতী রানী বলেন, আমরা জমিতে ধান লাগানো, আগাছা পরিস্কার, ধান কাটা মাড়াই সকল কাজ পুরুষদের সমান করলেও মজুরি কম পায়।
জামতলা আদিবাসিপাড়ার নারী শ্রমিক মায়া রানী জানা, জমিতে ধান রোপণ ও কাটা মাড়াইসহ বিভিন্ন কৃষি কাজ দীর্ঘদিন ধরে করে আসছি। তিনি আরো বলেন, জমিতে কাজে গেলে কত বৃষ্টি-বাদলসহ মাথার উপর হয়ে যায়। কিন্তু সে তুলনায় আমাদের অসুখ-বিসুখ খুব কম। আমরা সহজেই জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবেলা করে কৃষিকাজ করে থাকি।

জাতীয় আদিবাসী পরিষদ গোদাগাড়ী উপজেলা শাখার সভাপতি নন্দলাল টুডুর জানান, বরেন্দ্র অঞ্চলের হাজার হাজার একর জমিতে বিভিন্ন উন্নতজাতের শস্য উৎপাদন হচ্ছে। যা এ এলাকার খাদ্যের চাহিদা মিটিয়ে উৎবৃত্ত থাকে। আর এই খাদ্য ভান্ডার বরেন্দ্র অঞ্চলের কৃষি কাজে পুরুষ শ্রমিকদের পাশাপাশি নারী শ্রমিকরা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। তিনি বলেন, গোদাগাড়ী উপজেলায় এখন প্রায় ১২ হাজারের বেশি নারী কৃষি শ্রমিক রয়েছেন।

আদিবাসি নারী নেত্রী সুষ্মিতা টুডু বলেন, এলাকার আদিবাসি নারী শ্রমিকরা কৃষিকাজে অভাবনীয় সাফল্য এনেছেন। অন্যের জমিতে কাজ করার পাশাপাশি নিজেরায় দক্ষতার সঙ্গে ফসলচাষ করে সফল হচ্ছেন।

এ প্রসঙ্গে সম্মিলিত আদিবাসী নারী জোটের সভাপতি কল্পনা তির্কী বলেন, এ অঞ্চলের আদিবাসীরা জঙ্গল পরিস্কার করে সব জমিকে ফসলি জমিতে পরিণত করেছেন। ধানসহ ফসল উৎপাদনে আদিবাসী শ্রমিকদের অবদান রয়েছে সবচেয়ে বেশি। তিনি জানান, আদিবাসী নারীদের কৃষিশ্রমিক হিসেবে সাংবাধানিকভাবে স্বীকৃতি প্রদানসহ নায্য মজুরি নিশ্চিত করার দাবী জানান।