ঢাকা বৃহঃস্পতিবার, ২৮শে মার্চ ২০২৪, ১৫ই চৈত্র ১৪৩০


দাম না পাওয়ায় হতাশায় রাজশাহীর পান চাষিরা


২ আগস্ট ২০২১ ০০:৫৭

ছবি- সংগৃহিত

রাজশাহীর মোহনপুর, বাগমারা ও দুর্গাপুর উপজেলা পান চাষের জন্য বিখ্যাত। এ অঞ্চলের কুষকদের প্রধান অর্থকারী ফসল পানচাষ। কিন্তু বর্তমান সময়ে হাট-বাজারে পানের ব্যাপক আমদানি হলেও নেই বিক্রি। পান চালানেও বিপাকে পড়েছে পান চাষিরা। এ জন্য হাটবাজারে পানির দামে পান বিক্রি করতে দেখা যাচ্ছে অনেকের। সব মিলিয়ে চরম হতাশায় ভুগছেন স্থানীয় পান চাষিরা। শ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধি, অতিরিক্ত দামে খৈল ও বাঁশের শলা ক্রয়সহ বরজের প্রয়োজনীয় উপকরণের বাজার উর্ধ্বমুখী হওয়ায় এতে আরও বিপাকে পড়েছেন তারা। পানের দাম একেবারে নিম্নমুখি হওয়ায় কষ্টের মধ্যে রয়েছে রাজশাহীর কৃষকরা। 

রাজশাহীর বাগমারার মোহনগঞ্জ হাটে পান বিক্রি করতে আসা চাষি আকরারম আলী বলেন, চলমান করোনাভাইরাসের কারণে বিগত দিনে টানা একর পর এক বিধিনিষেধ লকডাউন থাকার ফলে দেশের বিভিন্ন এলাকা হতে পাইকাররা আসতে না পারায় পানের দাম কয়েকগুণ কমতিতে পান বিক্রি করতে হচ্ছে।

দুর্গাপুর উপজেলার পানচাষি মিজানুর রহমান বলেন, ২০শতক জমিতে পানের বরজ করেছি। পান বরজ খুব সুন্দর হয়েছে। কিন্তু গত এক মাস হতে যে পানের দাম ছিলো ৩০টাকা বিড়া সেই পানের দাম এখন ৫টাকা। এভাবে পানের দাম কমতে থাকলে আমরা ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছি। পানচাষি রুহুল আমিন জানান, ১৫ শতক জমিতে পান করি এবং উৎপাদনও আশারুপ হয়েছে। পূর্বে যে পান বিক্রি হয়েছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা বিড়া। সেই পান এখন ২০ থেকে ৩০ টাকা। বর্তমানে বাজার প্রচন্ড খারাপ। পান গাছ থেকে পান সংগ্রহের জন্য একজন শ্রমিকের মজুরি পাঁচ শত টাকা। অথচ পান হাটে বিক্রি করে শ্রমিকের টাকায় হচ্ছে না।

মোহনপুর উপজেলার বাকশিমইল গ্রামের পান চাষি হবিবুর রহমান জানান, ২০ শতক জমিতে পানবরজ করেছি। বরজে অনেক পান আছে। হাটে নিয়ে গিয়ে ক্রেতার সংকটে খুব খারাপ সময়ের মধ্য দিন কাটছে। বর্তমানে পানের দাম ভাল না পাওয়ায় ক্ষতির মধ্যে পড়েছি।

শিবপুর গ্রামের পাইকারি পান ক্রেতা বাবু জানান, প্রতিবছর এ সময় পানের বাজার একটু খারাপ যায়। কারন বর্ষা মুওসুমে বরজে পানের গাছ বেশি লম্বা হয় এবং অন্য সময়ের চেয়ে এ সময় পান উৎপাদন বেড়ে যায়। ফলে হাটেও আমদানী বেশি হয়। এতে করে দাম কম হয়। তবে আর কিছু দিন পর হতে পানের মূল্য বেড়ে যাবে। তিনি বলেন, ছোট পানের পোয়া পূর্বে ১৫০০টাকার স্থলে এখন ৪০০-৬০০ টাকা। এবং বড় পানের পোয়া ২০০০ টাকার স্থলে এখন ৬০০-৮০০ থেকে টাকা বিক্রি হচ্ছে।

পাকুড়িয়া পান হাট কমিটির পরিচালক আতাউর রহমান বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে সরকারী বিধিনিষেধ থাকায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চল পাইকাররা ঠিকমত আসতে পারছে না। ফলে আমদানি বেশি হলেও ক্রয়-বিক্রয় আগের তুলনায় কম হচ্ছে। পরিবেশ স্বাভাবিক হওয়ায় পুরোদমে পান বেঁচা-কেনা শুরু হলে। পানের দামও বাড়তে আরম্ভ করবে। তিনি আরো বলেন, হাটে পাইকারদের উপস্থিতি কম হওয়ায় প্রতি হাটে কমিটির অনেক লোকসান গুনতে হচ্ছে।

রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা মোছাঃ উম্মে ছালমা জানান, চলমান বিধিনিষেধে জরুরি কৃষি পণ্যের ক্ষেত্রে কোন বাধা নিষেধ নেই। এক্ষেত্রে পান চালানে কোন সমস্যা হওয়ার সুযোগ নেই। প্রতিবছরের বর্ষা মুওমুমে পানের উৎপাদন অন্য সময়ের চেয়ে অনেক বেশি হয়। ফলে এ সময় পানের বাজার কিছুটা কম হয়ে থাকে। তবে আর কিছু দিনের মধ্যে পানের দাম আগের মত বৃদ্ধি পাবে। তিনি আরো বলেন, কোভিড এর কোন প্রভাব চাষিদের উপর পড়ার সুযোগ নেই। কারন চাষিরা যেনো নির্বিঘ্নে তাদের ক্ষেতের উৎপাদিত ফসল বাজারজাত করতে পারে সেজন্য প্রতিটি উপজেলায় আমাদের মনিটরিং ব্যবস্থা অব্যাহত রয়েছে।