ঢাকা বৃহঃস্পতিবার, ২৮শে মার্চ ২০২৪, ১৫ই চৈত্র ১৪৩০

থমথমে সীমান্ত, সমঝোতার চেষ্টা


১ মার্চ ২০১৯ ২৩:৩৫

জম্মু-কাশ্মীর সীমান্ত থমথমে। ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সংঘর্ষ অব্যাহত রয়েছে।

গতকালও ভারতীয় সেনা চৌকিতে পাকিস্তান গুলি করেছে বলে ভারতের দাবি। তারা বলেছে, বিনা উস্কানিতে বৃহস্পতিবার সকাল ৬টার দিকে পাকিস্তানের সেনারা যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর মর্টার ছোড়ে ও হামলা চালায়। এর জবাব দিয়েছে ভারত।

নিয়ন্ত্রণ রেখার ৫ কিলোমিটারের মধ্যে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। অধিবাসীদের বাড়ির ভিতরে থাকতে বলা হয়েছে। এ অবস্থায় মধ্যস্থতার প্রস্তাব দিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরাঁ।

তার মুখপাত্র স্টিফেন ডুজাররিক নিয়মিত প্রেসব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানিয়েছেন। এছাড়া মধ্যস্থতার প্রস্তাব দিয়েছে রাশিয়াও।

উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে সংকট সমাধানের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে বলে আভাষ মিলেছে। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের কথায় তারই পূর্বাভাষ পাওয়া গেছে। ভিয়েতনামে উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের সঙ্গে দ্বিতীয় বৈঠকের পর এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছেন, পাকিস্তান ও ভারত থেকে যৌক্তিক আকর্ষণীয় খবর আছে আমাদের কাছে। তাদেরকে থামানো চেষ্টায় আমরা যুক্ত হয়েছি। কিছু ভাল খবরও আসছে। আমি আশা করছি, এই সংঘাতের একটি সমাধান হতে যাচ্ছে।

এ ছাড়া বুধবার যুক্তরাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক অন্য সম্প্রদায়গুলো পাকিস্তান ও ভারতের প্রতি উত্তেজনা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছে। আর এই মুহূর্তে পাকিস্তানের হাতে আটক ভারতীয় পাইলট উইং কমান্ডার অভিনন্দন আলোচনায় উঠে এসেছেন। তাকে আজ শুক্রবার মুক্তি দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। তার আগে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মাহমুদ কুরেশি বলেছেন, ভারত উত্তেজনা প্রশমনে অগ্রসর হলে তারা ওই পাইলটকে মুক্তি দিতে প্রস্তুত। এ ছাড়া সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের গুরুত্বপূর্ণ বার্তা নিয়ে গতকালই পাকিস্তানে আসার কথা তার পররাষ্ট্রমন্ত্রী আদেল আল জুবেইরের।

গুরুত্বপূর্ণ বার্তা নিয়ে পাকিস্তান আসার কথা সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর
সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ বার্তা নিয়ে পাকিস্তান সফরে বৃহস্পতিবার আসার কথা সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আদেল আল জুবেইরের। পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মাহমুদ কুরেশি বলেছেন, বুধবার দিবাগত রাতে সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আমি কথা বলেছি। তিনি পাকিস্তান সফরের ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। তার এ ইচ্ছাকে আমি স্বাগত জানিয়েছি। এ খবর দিয়েছে অনলাইন ডন।

উল্লেখ্য, ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে পাকিস্তান সফর করেন সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান। এ সময়ে তিনি এ দেশটির সঙ্গে ২০০০ কোটি ডলারের চুক্তি স্বাক্ষর করেন। নিজেকে সৌদি আরবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত হিসেবে বিবেচনা করতে আহ্বান জানান পাকিস্তানের প্রতি। তাকে অভ্যর্থনা জানাতে বিমানঘাঁটি থেকে প্রটোকল ভেঙে নিজেই গাড়ি চালিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে নিয়ে যান প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। ক্রাউন প্রিন্স পরে ইমরান খান ও পাকিস্তানের ভূয়সী প্রশংসা করেন।

ফলে সৌদি আরবের সঙ্গে পাকিস্তানের এক শক্তিশালী বন্ধন সৃষ্টি হয়েছে। সেই সম্পর্কের ওপর ভিত্তি করে সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী কি বার্তা নিয়ে পাকিস্তানে আসছেন তা স্পষ্ট নয়। তবে এই মুহূর্তে পাকিস্তান যে সংকট মোকাবিলা করছে তা হলো ভারতের সঙ্গে উত্তেজনা। ধারণা করা যায়, এই সংকট নিয়ে কোনো গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দিতে পারেন তিনি ইমরান খানকে।

পরিস্থিতি নাগালের বাইরে যেতে দেয়া উচিত নয়, আজ মুক্তি পাচ্ছেন পাইলট
আবারো হুঁশিয়ারি দিয়েছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। তিনি পার্লামেন্টের যৌথ অধিবেশনে বলেছেন, পরিস্থিতি হাতের নাগালের বাইরে যেতে দেয়া উচিত নয়। যদি তা-ই হয় তাহলে পাকিস্তানকে প্রতিশোধ নিতে হবে। বৃহস্পতিবার তিনি পার্লামেন্টে দেয়া ভাষণে ভারতকে উদ্দেশ্য করে এসব কথা বলেন। এদিন তিনি ঘোষণা দেন, শান্তির অংশ হিসেবে তাদের হাতে আটক ভারতীয় পাইলট অভিনন্দনকে শুক্রবার মুক্তি দেয়া হবে।

সীমান্তে ‘যুদ্ধ হিস্টেরিয়া’ ইস্যুতে তিনি সবাইকে সতর্ক করেন। আবারো ইমরান খান বলেন, ভুল হিসাবের কারণে অনেক দেশ ধ্বংস হয়ে গেছে। তিনি আশঙ্কা করেন, আবারো ভুল হিসাবনিকাশ করা হতে পারে। শান্তির ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, যুদ্ধ কোনো সমস্যার সমাধান নয়। যদি ভারত কোনো অ্যাকশনে যায় তাহলে আমরা প্রতিশোধ নেবো। এ সময় তিনি বলেন, কাশ্মীর ইস্যুতে আলোচনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, আমার মনে হয় ভারতীয় জনগণ বর্তমান সরকারের যুদ্ধবাজ আচরণের সঙ্গে একমত নন।

ইমরান খান বলেন, কাশ্মীরের যুবকরা কেন আত্মঘাতী হামলা করছে তা ভারতকে জিজ্ঞেস করা উচিত। তিনি বলেন, যদিও আত্মঘাতী হামলার জন্য ভারত দায়ী করে ইসলামপন্থি উগ্রবাদীদের, তবু এটা হলো হিন্দু যোদ্ধাদের অবলম্বন করা একটি অভিন্ন কৌশল, যা ব্যবহার করা হয়েছিল ৯/১১ তে তামিল টাইগারদের সময়ে। তারা (হামলাকারী) এসব ঘটাচ্ছে ধর্মের কারণে নয়। দুর্বলের অস্ত্র হয়ে উঠেছে আত্মঘাতী হামলা। তারা দিশাহারা হয়ে এসব করে।

ইমরান খান আরো যোগ করে বলেন, কোনো প্রমাণ ছাড়া (পালওয়ামা) হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করছে ভারত। তিনি ভারতের উদ্দেশে প্রশ্ন রাখেন তাদের কি উচিত না জিজ্ঞেস করা যে, কেন ১৯ বছর বয়সী একজন মানুষ মানববোমা হতে রাজি হয়?
ইমরান খান আরো বলেন, কোনো আদর্শ বা ধারণাকে আপনি জেলে পাঠাতে পারবেন না। তিনি কাশ্মীর ইস্যুতে ভারতীয় নীতি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। বলেন, এসব ইস্যুর কারণ হলো কাশ্মীর। গত চার বছরে যেসব ঘটনা ঘটে গেছে সে বিষয়ে আমি ভারতীয় জনগণের কাছে জানতে চাই। কাশ্মীরে একটি আন্দোলন আছে। এক পর্যায়ে কাশ্মীরের নেতারা কিন্তু বিচ্ছিন্নতা বা স্বাধীনতা চান নি। কিন্তু ভারতীয় নৃশংসতার কারণে, তারা সবাই এখন স্বাধীনতা দাবি করছেন। কাশ্মীরে সবকিছুর জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করা হবে আর কতদিন?


ইমরান খান আরো বলেন, তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ফোন করার চেষ্টা করেছিলেন। কারণ, উত্তেজনা ভারত বা পাকিস্তান কারো স্বার্থে নয়। এ সময় তিনি পাকিস্তানি মিডিয়ার প্রশংসা করেন। বলেন, পাকিস্তানের মিডিয়া অত্যন্ত পরিপক্বতা দেখিয়েছে।

পারমাণবিক যুদ্ধে রূপ নেবে উত্তেজনা! পাঞ্জাবের হাসপাতালে রেড এলার্ট
পারমাণবিক শক্তিধর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার উত্তেজনায় কাঁপছে ভারতীয় উপমহাদেশ। কারণ, একটি পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করা হলে এ অঞ্চল অস্থিতিশীল হয়ে উঠবে। এমন পূর্বাভাস বিশ্লেষকদের। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে দুই দেশের ভেতরেই ক্ষোভের আগুন জ্বলছে। যুদ্ধ শুরু হলে পক্ষ ও বিপক্ষ যেমন ক্ষয়ক্ষতির কথা অস্বীকার করে নিজের শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ দিতে চেষ্টা করে এক্ষেত্রেও তাই ঘটছে। এমন অবস্থায় পাকিস্তানের পাঞ্জাবে অবস্থিত সরকারি তিনটি হাসপাতালে রেড এলার্ট জারি করা হয়েছে। প্রশাসনকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে যেকোনো জরুরি অবস্থা মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত থাকতে। এ অবস্থায় দুই দেশকেই সংযত থাকতে আহ্বান করা হচ্ছে আন্তর্জাতিক মহল থেকে। যদি সামান্য ভুল করে বসে কোনো দেশ, তাহলে পারমাণবিক যুদ্ধে রূপ নিতে পারে এই উত্তেজনা।
ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সীমান্ত উত্তেজনা অগ্নিশর্মা রূপ ধারণ করার পর পাকিস্তানের পাঞ্জাব সরকার রাজ্যজুড়ে সমস্ত চিকিৎসক, নার্স, প্যারামেডিক স্টাফদের ছুটি বাতিল করেছে।

রাওয়ালপিন্ডি মেডিকেল ইউনিভার্সিটির (আরএমএইউ) ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ডা. মোহাম্মদ উমর অনলাইন ডন’কে বলেছেন, সব ডাক্তার, নার্স ও প্যারামেডিকেল স্টাফদের ছুটি বাতিল করে তাদেরকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে তাৎক্ষণিক জরুরি অবস্থায় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য। প্রস্তুত রাখা হয়েছে অ্যাম্বুলেন্স। তিনি বলেছেন, এ প্রদেশে আছে তিনটি সরকারি হাসপাতাল। এসব হাসপাতালকে জরুরি ভিত্তিতে বেড বরাদ্দ রাখার জন্য বলা হয়েছে। বলা হয়েছে, চলমান অবস্থায় সব রকম সরঞ্জাম প্রস্তুত রাখতে। কোনো বড় বিপর্যয়ের জন্য প্রস্তুত থাকতে মক বা মহড়া জাতীয় চর্চা রাখতে বলা হয়েছে। সার্বক্ষণিক ডাক্তার ও নার্স থাকবে এসব হাসপাতালে। কিছু স্টাফকে কল করামাত্র হাসপাতালে চলে আসবেন। তিনি আরো বলেছেন, প্রস্তুতি তদারকি করতে তিনটি হাসপাতালই পরিদর্শন করবেন তিনি। জানিয়েছেন, তাদের কাছে পর্যাপ্ত ওষুধ মজুত আছে। আরো ওষুধ সংগ্রহ করা হবে পরবর্তী দু’দিনে।

ইমরান খানের প্রস্তাবে অনড় ভারত
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের প্রস্তাবে দৃশ্যত অনড় ভারত। দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধাবস্থায় আলোচনার আহ্বান জানিয়ে ‘ভুল’ না করার কথা বলেছিলেন তিনি। বলেছিলেন, ভারতের শুভবুদ্ধির উদয় হবে বলে তিনি আশাবাদী। কিন্তু বুধবার ভারত জানিয়ে দিয়েছে, কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণ রেখায় যে বিমান হামলা বা আকাশপথে যুদ্ধ হচ্ছে তা আগ্রাসী কর্মকাণ্ডের ফল। অর্থাৎ ভারত বলতে চাইছে, পাকিস্তান আগ্রাসী অবস্থান নেয়ার কারণে ওই নিয়ন্ত্রণ রেখায় দুই দেশের মধ্যে আকাশপথের লড়াই চলছে। ভারতের এমন অবস্থানে লড়াই আরো তীব্র হয়ে উঠতে পারে।

এ বিষয়টিকে জোরালোভাবে ফুটিয়ে তুলেছে আরেকটি ঘটনা। তা হলো, নয়াদিল্লিতে নিযুক্ত পাকিস্তানের ভারপ্রাপ্ত হাইকমশিনার সৈয়দ হায়দার শাহকে তলব করে ভারত। এ খবর দিয়েছে অনলাইন টাইমস অব ইন্ডিয়া।


এতে আরো বলা হয়, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এরই মধ্যে তার তিন বাহিনীর প্রধানদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। তারপর তিনি ‘বিনা উস্কানিতে আগ্রাসন’ চালানোর বিরুদ্ধে প্রতিশোধে গেছেন। দাবি করা হয়েছে, পাকিস্তান বিমানবাহিনী ভারতীয় আকাশসীমা লঙ্ঘন করেছে এবং ভারতীয় সেনাবাহিনীর অবস্থান লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে। এ কারণে ভারত ওই প্রতিশোধে গেছে।


ওদিকে পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সংলাপের জবাবে তার ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনারকে তলব করে ভারত তার হাতে প্রমাণ হিসেবে দলিল তুলে দিয়েছে। তাতে পালওয়ামা হামলায় জৈশ ই মোহাম্মদের জড়িত থাকার বিষয়ে সুস্পষ্ট ও বিস্তারিত বর্ণনা রয়েছে। তাতে আরো বলা হয়েছে, পাকিস্তানের ভেতরে এই সন্ত্রাসী গ্রুপের ক্যাম্পের উপস্থিতি আছে। তাদের নেতারাও রয়েছেন পাকিস্তানের ভেতরে।


ইমরান খান এ উত্তেজনা নিয়ে দীর্ঘ বিবৃতি দিয়েছেন। তাতে তিনি ভুল হিসাবের বড় বিপদের কথা উল্লেখ করেছেন। দুটি দেশই পারমাণবিক অস্ত্রের অধিকারী এ কথাও স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। তিনি পালওয়ামা হামলায় যে বেদনা সৃষ্টি হয়েছে তাও স্বীকার করে নিয়েছেন। প্রস্তাব করেছেন সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যেকোনো সংলাপের জন্য প্রস্তুত তিনি। কিন্তু পাকিস্তানের ভেতরে সন্ত্রাসীদের অবকাঠামো থাকার কথা ক্রমাগতভাবে পাকিস্তানের রাজনৈতিক নেতৃত্ব ও সেনা নেতারা অস্বীকার করার কারণে ভারত এর নিন্দা জানিয়েছে। তাই ভারতীয় নেতারা ইমরান খানের প্রস্তাবকে কোনো রকম উল্লেখযোগ্য ছাড় না দিয়েই অথবা কোনো রকম ব্যবস্থা না নিয়েই উত্তেজনা প্রশমনের উদ্যোগ হিসেবে দেখছেন।

আমরা এতিমদের উপমহাদেশ চাই না: ফাতিমা ভুট্টো
পাকিস্তানের হাতে আটক ভারতীয় বিমানবাহিনীর পাইলটের মুক্তি দাবি করেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টোর ভাইঝি ফাতিমা ভুট্টো। আকাশপথে লড়াইয়ের সময় পাকিস্তানের হাতে আটক হন ওই পাইলট। বুধবার তার মুক্তি দাবি করে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের কাছে একটি আবেগঘন চিঠি লিখেছেন ফাতিমা। তা প্রকাশ হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী পত্রিকা নিউ ইয়র্ক টাইমসে।

এ খবর দিয়েছে ভারতের সরকারি বার্তা সংস্থা পিটিআই। এতে আরো বলা হয়েছে, বুধবার দুই পক্ষের মধ্যে আকাশপথে লড়াই তীব্র হয়ে ওঠার সময় মিগ ২১ বাইসন যুদ্ধবিমান থেকে নিরাপদে বেরিয়ে পড়েন ভারতীয় বিমানবাহিনীর পাইলট। তিনি নেমে আসেন নিয়ন্ত্রণ রেখার ওপারে। এ সময় তাকে আটক করে পাকিস্তান কর্তৃপক্ষ। এরপর তাকে অবিলম্বে ও নিরাপদে ফেরত দেয়ার দাবি জানায় ভারত। ওই পাইলট বর্তমানে পাকিস্তানের শক্তিধর সেনাবাহিনীর হেফাজতে রয়েছেন।

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে এই উত্তেজনার সময়ে তাই নিউ ইয়র্ক টাইমসে মতামত কলাম লিখেছেন ফাতিমা ভুট্টো (৩৬)। তাতে তিনি লিখেছেন, শান্তি, মানবতা ও মর্যাদার প্রতি আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সেই দিক থেকে ভারতীয় ওই পাইলটের মুক্তি দাবি করি আমি এবং পাকিস্তানের তরুণ প্রজন্মের আরো অনেকে।


তিনি আরো লিখেছেন, আমরা তো সারাটা জীবনই কাটিয়ে দিলাম যুদ্ধ করে। আমি আর দেখতে চাই না পাকিস্তানি কোনো সেনা সদস্য মারা যাচ্ছেন। আমি আর দেখতে চাই না ভারতীয় কোনো সেনা সদস্য মারা যাচ্ছেন। আমরা এতিমদের একটি উপমহাদেশ দেখতে চাই না। উল্লেখ্য, পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টোর ছেলে মুর্তজা ভুট্টোর মেয়ে ফাতিমা ভুট্টো।

তিনি ওই মন্তব্য কলামে আরো লিখেছেন, আমাদের প্রজন্মের পাকিস্তানিরা কথা বলার অধিকারের জন্য লড়াই করেছি। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো শান্তি। তার পক্ষে কথা বলতে আমরা ভীত নই। কিন্তু আমাদের রয়েছে সামরিক স্বৈরতন্ত্র, সন্ত্রাসের অভিজ্ঞতা ও অনিশ্চয়তার দীর্ঘ এক ইতিহাস। তিনি আরো বলেছেন, তার মতো দেশের বিশাল একটি অংশের চলমান উত্তেজনার প্রতি সমর্থন নেই।


ফাতিমা লিখেছেন, আমি কখনোই দেখি নি আমার দেশ প্রতিবেশীর (ভারতের) সঙ্গে শান্তিতে আছে। কিন্তু টুইটার অ্যাকাউন্টে কখনোই আমি আমাদের দুই পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্রের মধ্যে যুদ্ধে ভূমিকা রাখতে দেখি নি।

উল্লেখ্য, বুধবার বিকালে ‘সে নো টু ওয়্যার’ হ্যাসট্যাগ শুরু হয়। এর পরই টুইটারে তা বিশ্বজুড়ে নাম্বার ওয়ান স্পট হয়ে ওঠে। গত ১৪ই ফেব্রুয়ারি জম্মু-কাশ্মিরের পালওয়ামায় সন্ত্রাসী হামলার পর থেকেই ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা তুঙ্গে। এর জবাবে মঙ্গলবার দিনের শুরুতে নিয়ন্ত্রণ রেখা থেকে ৮০ কিলোমিটার দূরে বালাকোটে জৈশ ই মোহাম্মদের সবচেয়ে বড় প্রশিক্ষণ শিবিরে বোমা হামলা করে ভারত। এতে ওই ক্যাম্প ধ্বংস হয়ে গেছে বলে বলা হচ্ছে। ওই হামলায় বিপুল সংখ্যক জৈশ ই মোহাম্মদের সদস্য নিহত হয়েছেন বলে দাবি করে ভারত।

এরপর বুধবার পাকিস্তান দাবি করে, পাকিস্তানের আকাশ সীমায় প্রবেশের অভিযোগে ভারতীয় যুদ্ধবিমান প্রবেশ করায় তা গুলি করে ভূপাতিত করার দাবি করেছে পাকিস্তান। একই সঙ্গে একজন পাইলটকে গ্রেপ্তার করেছে তারা।

 

নতুনসময়/আইকে