ঢাকা বৃহঃস্পতিবার, ২৫শে এপ্রিল ২০২৪, ১৩ই বৈশাখ ১৪৩১


প্রতিদিন বিনামুল্যে দুপুরের খাবার, থেকে পারবেন সবাই


২৫ অক্টোবর ২০১৮ ২২:৫৮

ফাইল ফটো

‘যেই টাকা ইনকাম করি, তা থেকে ভাত খাইতে গেলে অনেক টাকা খরচ হয়ে যায়। ঢাকা শহরেতো পানি খাইতেও টাকা লাগে। সেইখানে দুপুর বেলা বিনা টাকায় পেট ভরে ইচ্ছামত খাইতে পারি এর থেকে বড় সুখ আর কি আছে। এখানে পেটভরে খাইতে দেয় সেই সঙ্গে পানি খাওয়ার ব্যবস্থাও আছে। তাই দুপুরে আমি ধানমন্ডি এলাকায় থাকলে এইখানে খাইতে আসি।’

উপরোক্ত কথা গুলো বলছিলেন আমিন মোহাম্মদ মেহমান খানায় দুপুরে খেতে আসা রিক্সাচালক আফতাব আলি। শুধু আফতাব আলি নয় এখানে প্রতিদিন দুপুরে খেতে আসে হাজার খানেকের বেশি নিম্ন আয়ের মানুষ। অনেকেই আবার এখান থেকে খাবার নিয়ে যান পরিবারের সদস্যদের জন্য। এখানে এসে কেউ না খেয়ে ফিরে যায় না।

একটা সময় ছিল যখন সমাজের উচ্চবিত্তরা মানুষের সেবা করার জন্য মুসাফির খানা খুলতেন। বাংলাদেশের অনেক জায়গাতেই মুসাফির খানা ছিল। দূর-দূরান্ত থেকে আসা মানুষজনদের মেহমানদারি করা হত এসব মুসাফির খানায়। কিন্তু বর্তমান সময়ে মানব সেবার এমন দৃষ্টান্ত খুবই বিরল। তবে এখনও ব্যতিক্রম কিছু মানুষ আছেন যারা মানুষের দুঃখ কষ্টের কথা ভাবেন, সমাজের কথা ভাবেন।

পৃথিবীতে গরীবের কেউ নেই এই কথাটিকে ভুল প্রমাণ করার উদ্দেশ্য থেকেই আমিন মোহাম্মদ গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা এম এম এনামুল শুরু করেছিলেন এক ব্যতিক্রমী প্রচেষ্টা। দীর্ঘদিন ধরে নিম্ন আয়ের মানুষদের এক বেলা খাবারের ব্যবস্থা করে আসছেন এ প্রতিষ্ঠানটি।

রাজধানী ধানমন্ডির সাত মসজিদ রোডে অবস্থিত আমিন মোহাম্মদ মেহমানখানায় সরেজমিনে দেখা যায়, প্রতিদিন এখানে দুপুরে খাবারের জন্য ভিড় করেন হাজার হাজার নিম্ন আয়ের মানুষ। রিকশাচালক, দিনমজুর, পথশিশু এমনকি অল্প আয়ের কর্মচারীরাও এখানে দুপুরে খাবার খান।

প্রতিদিন দুপুরেই আমিন মোহাম্মদ মেহমানখানায় চলে দুপুরে খাওয়ানোর আয়োজন। দুপুরে সাড়ে ১২টার পর থেকেই সিরিয়াল শুরু হয় এখানে খাবারের জন্য। দূর থেকেই দেখা যায় কয়েকশ রিকশা মেহমানখানার সামনে দাঁড়ানো। খাবারের হাড়ি নিয়ে বসে থাকেন মেহমানখানার কর্মচারীরা। একে একে খাবার প্লেটে তুলে দেন কর্মচারীরা।

এই মেহমানখানায় প্রতিদিন পাতলা খিচুড়ি খাওয়ানো হয়। খিচুড়ির মধ্যে মুরগির মাংস এবং সবজিও থাকে। এখানে দুপুর বেলায় দেখা যায় তৃপ্তি নিয়ে খাচ্ছেন নানা বয়স ও শ্রেণীর শত শত মানুষ।

এখানে প্রায় সময়ে খেতে আসেন নুর হোসেন নামের এক রিক্সাচালক। তিনি বলেন, ‘আমি বছিলায় থাকি। দুপুরে বাসায় খাইতে গেলে অনেক সময় নষ্ট হয়। তাই আমি দুপুরবেলা প্রায় এই খানেই খাই। খাইতে টাকাও লাগে না, আবার মজাও লাগে।’

খাবার পরিবেশনকারি বেলাল আহমেদ জানান, ‘প্রতিদিন ৮ টি বিশাল পাতিল ভর্তি করে খিচুড়ি রান্না করা হয়। যে আসে তাকেই খাবার দেওয়া হয়, কাউকেই না করা হয় না খাবার শেষ না হওয়া পর্যন্ত। একবেলা মানুষকে তৃপ্তি করে খাওয়ানোই আমাদের মেহমানখানার মূল লক্ষ্য।’

আমাদের সমাজে অনেক বিত্তবান মানুষও আছে। কিন্তু বিত্তবান মানুষদের কয়জন দরিদ্র ও অনাহারী মানুষের কথা ভাবে। বিত্তবান ব্যক্তিরা যদি একটু আন্তরিক হতো, তাহলে নিম্ন আয়ের মানুষগুলো আরও একটু ভাল থাকতো। এক্ষেত্রে আমিন মোহাম্মদ মেহমানখানা সকলের জন্য দৃষ্টান্ত হতে পারে।