ঢাকা শুক্রবার, ২৯শে মার্চ ২০২৪, ১৫ই চৈত্র ১৪৩০


পাসপোর্টের ‘রঙ’ বলে দেবে সবকিছু


১৩ অক্টোবর ২০১৮ ২১:৪২

যেকোনো দেশই চায় সে স্থানে কি পরিমাণ লোক প্রবেশ করছে ও দেশ ছেড়ে যাচ্ছে তার সঠিক হিসাব ও তথ্যাদি সংরক্ষণ করতে। একটি পাসপোর্ট এই ব্যবস্থায় তথ্য সংরক্ষণ করার একক রূপে কাজ করে। একেক দেশের পাসপোর্টের রঙ একেক রকম। বাংলাদেশের সাধারণ নাগরিকদের জন্য পাসপোর্টের রং সবুজ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পাসপোর্টর রং কালচে নীল। আবার তুরস্কের পাসপোর্টের রং মেরুন।

এসব রঙ প্রত্যেকটি পাসপোর্টের আলাদা আলাদা গুরুত্ব বহন করে। কখনো ভেবে দেখেছেন, কেন পাসপোর্টের রঙে এই ভিন্নতা? কিংবা কিসের ভিত্তিতে দেশগুলো তাদের পাসপোর্টের রং নির্ধারণ করে?

বিভিন্ন দেশের পাসপোর্ট সম্পর্কিত নানা তথ্য সন্নিবেশের কাজ করে আরটন গ্রুপ। প্রতিষ্ঠানটির ভাইস প্রেসিডেন্ট র‍্যান্ট বোগহোসেইন জানালেন পাসপোর্টের রঙের ভিন্নতার কারণ। তিনি জানান, প্রতিটি রাষ্ট্রের পাসপোর্টের রং মূলত চারটি মূল রং থেকে নির্ধারিত হয়। এই রংগুলো হলো লাল, সবুজ, নীল ও কালো। এই চারটি রঙের বিভিন্ন শেড দিয়ে তৈরি করা হয় বিভিন্ন দেশের পাসপোর্ট।

বিজনেস ইনসাইডারকে র‍্যান্ট বলেন, ‘এই প্রতিটি রঙের মধ্যেই আমরা অনেক রঙের বৈচিত্র্য দেখতে পাই।’

পাসপোর্ট দেখতে কেমন হবে তা নির্ধারণ করে দেয় ইন্টারন্যাশনাল সিভিল এভিয়েশন অরগানাইজেশন (আইসিএও)। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকারকে তাদের পাসপোর্টের রং এবং নকশা বেছে নেওয়ার সময় এর পক্ষে যথাযথ কারণ দর্শাতে হয় বলেও জানান র‍্যান্ট।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত দেশগুলোর পাসপোর্টের রং কিছুটা লালচে খয়েরি। অন্যদিকে কিছু ক্যারিবীয় দেশের পাসপোর্টের রং নীল। এর কারণ হতে পারে ভৌগোলিক বা রাজনৈতিক।

র‍্যান্ট বলেন, কেউ কেউ যুক্তি দেন যে ওই অঞ্চলের কমিউনিস্ট সম্পর্কিত ইতিহাসের কারণে দেশগুলোর পাসপোর্টের রং লাল ঘেঁষা। অন্যদিকে নতুন পৃথিবী অর্থাৎ উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকার মতো দেশগুলোর প্রতীক হিসেবে নীল রং ব্যবহার করা হতে পারে। এ ছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়নে যোগ দেওয়ার আশায় তুরস্ক তাদের পাসপোর্টের রং বদলে লালচে খয়েরি করেছে বলেও দাবি করেন তিনি।

কোনো কোনো দেশের পাসপোর্টের রঙের ক্ষেত্রে ধর্মীয় বিশ্বাসও প্রাধান্য পায়। যেমন পাকিস্তান, সৌদি আরব, মরক্কোর মতো দেশগুলোর পাসপোর্টের রং সবুজের বিভিন্ন শেড। ইসলাম ধর্মে সবুজ রঙের বিশেষ গুরুত্ব আছে বলেই মুসলিম দেশগুলো এই রঙের পাসপোর্ট বেছে নেয় বলে দাবি র‍্যান্টের।

প্রকৃতি ও জীবনের প্রতীক সবুজ রং মুসলমানদের সবশেষ নবী হজরত মুহাম্মদ (স.)-এর প্রিয় রং ছিল বলে বিশ্বাস করা হয়। আর এ কারণেই আফগানিস্তান, ইরানের মতো বেশ কয়েকটি মুসলিম দেশের পতাকায়ও সবুজ রংটি ব্যবহার করা হয়েছে।

কিছু কিছু দেশ আবার নিজেদের আলাদা করে বোঝাতে পাসপোর্টের রং নির্ধারণ করে। যেমন, সুইজারল্যান্ডের পাসপোর্টের রং উজ্জ্বল লাল। সিঙ্গাপুরের পাসপোর্ট কমলাটে ধাঁচের লাল। অন্যদিকে ভ্রমণপিপাসুদের জন্য জরুরি ভিত্তিতে সাদা রঙের পাসপোর্ট ইস্যু করে কানাডা।

এদিকে বেশ কয়েকবার পাসপোর্টর রং পরিবর্তন করেছে যুক্তরাষ্ট্র। লাল থেকে সবুজ আবার সবুজ থেকে এখন নীল রঙে পরিণত হয়েছে দেশটির পাসপোর্টের রং।

সাধারণত একটি দেশের ইতিহাস ও সংস্কৃতির ওপর নির্ভর করে পাসপোর্টের রং ঠিক করা হয়। তবে ওই রঙের বরাদ্দ বাকি আছে কি না সেটিও নিশ্চিত হতে হয়।

পাসপোর্ট তৈরির প্রক্রিয়াটি অত্যন্ত নিয়ন্ত্রিত। পুরো বিশ্বের মাত্র কয়েকটি প্রতিষ্ঠান এই কাজটি করতে পারে বলে জানান র‍্যান্ট। প্রতিটি দেশের চাহিদা অনুযায়ী এসব পাসপোর্ট তৈরি কাজ হয়।

কানাডা, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও নরওয়ের মতো কিছু দেশের পাসপোর্টের পাতায় গোপন ছবি থাকে যা আল্ট্রা ভায়োলেট আলোতে দৃশ্যমান হয়। কোন দেশের পাসপোর্ট কোন রঙের হয় তা আইসিএও ঠিক করে দিলেও সেখানে নিজেদের পছন্দমতো বিষয় যুক্ত করতে পারে দেশগুলো। আর সে অনুযায়ীই তৈরি হয় একটি রাষ্ট্রের জাতীয়তা প্রদর্শনের এই গুরুত্বপূর্ণ দলিলটি।

এমএ