ঢাকা শনিবার, ২৭শে এপ্রিল ২০২৪, ১৪ই বৈশাখ ১৪৩১

বেপরোয়া গুলিস্তানের ফুটপাতে বসা মোবাইল মার্কেট


৩১ আগস্ট ২০১৮ ০২:৪০

গোলাপশাহ মাজারের চত্ত্বর থেকে নগর ভবন ছাড়িয়ে পুলিশের হেডকোয়ার্টারের দিকে যেতে ওসমানী উদ্যানের দক্ষিণ পাশে ফুটপাত দিয়ে বসে চোরাই মোবাইল মার্কেট। এখানে শুধু সাধারণ মানুষই মোবাইল কিনতে আসে না আসে পুলিশ এবং ভদ্র লোকও।

এই ভ্রাম্যমাণ চোরাই মোবাইলের হাট বসে সকাল ৯ টা থেকে রাত ৮.৩০-৯টা পর্যন্ত। কিন্তু অন্য সময় ক্রেতার ভীড় না থকলেও সন্ধ্যার পরে এই চোরাই মার্কেট জমতে থাকে যা চলে মার্কেট বন্ধ করার আগ পর্যন্ত।

ফুটপাথ দিয়ে বসে চোরাই মোবাইলের হাট পার্কের পাশ দিয়ে পথচারীদের বসার টুল এবং নিজেরা টুল বানিয়ে বসে আছে। কোনো পথচারীকে এখন টুলে বসে বিশ্রম নেয়া তো দূরের কথা ওখানে দাড়ানো জায়গা পর্যন্ত নাই।

এই চোরাই মোবাইল মার্কেটে কিছু ব্যবসায়ীকে দেখা গেছে ভালো মোবাইল এনে দিবে বলে বাইনা নিতে। কিন্ত মার্কেট চোরাই মোবাইল আসে কোথা থেকে তা আজও অজানা রয়েছে।

যখন ঢাকা সিটিতে ফুটপাত মুক্ত করার জন্য অভিযান চলছে কিছু দিন পর পর বা থেমে থেমে ঠিক সে সময় কি করে এত দীর্ঘ একটি অবৈধ মোবাইল মার্কেট চলতে পারে তা ভাবিয়ে তুলছে সিটিতে বসবাস কারী সাধারণ মানুষকে। যেখানে সারা দিন রাত থাকে পুলিশের প্রহরা আর নগর ভবনের কর্মকর্তাদের পদচারনায় মুখোর সেই স্থানে এমন অবৈধ চোরাই মোবাইল মার্কেট বসে প্রতিদিন।

আর এখানে শুধু কম দামের মোবাইলি পাওয়া যায় না। এই চোরাই মার্কেটে পাওয়া যায় আইফোন টেন প্লিস থেকে শুরু করে সেমস্যাং, সেমফোনি, লাভা, ওপপো, নোকিয়াসহ সকল বিরান্ডের মোবাইল এবং সকল মোবাইলের পার্স। আর এখানেই শেষ না কম্পিউটারের মনিটর, বিরান্ডের কিমিরা, ডিল মেশিন, স্ত্রী/ আইরন, টেলিফোন, সাউন্ড বকস, চার্যার লাইট, টেপ র্রেকড, চুলে হিট করা মেশিন, ট্রিপট, বৈদ্যুতিক বাল্ব, সিলিম ফ্যান, টিভির রিমট, মালটি পিলাক, মোবাইল/ কম্পিউটারের কর্ট এমন কি ডাক্তারি যন্ত্রপাতিও মেলে এই অবৈধ্য মার্কেটে।

গোলাপশাহ মসজিদের মুখ থেকে নগর ভবন ছাড়িয়ে পুলিশের হেডকোয়ার্টারের গেট পর্যন্ত বসে এই দোকান যা ছোট বড় মিলিয়ে বসে ১৩৫টি দোকান। যা পল্টন ফুটপথ মার্কেট। দৈনিক বাংলা মোড় থেকে ফকিরাপুল আর ফকিরাপুর থেকে কাকরাইল ফুটপথ মার্কেট কেউ হার মানাই।

এই অবৈধ্য মোবাইল মার্কেটের এক চা বিক্রেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এই মোবাইল মার্কেট টা এখানে বসে প্রিয়ায় দুই থেকে আড়াই বছর। এখানে কেউ ফ্রি ব্যবসা করতে পারে না সব মোবাইল বিক্রেতাকে দৈনিক/ প্রতিদিন গড়ে ১০০ থেকে ১২০ টাকা দিতে হয়। একজন বা দুইজন এসে টাকা তুলে নিয়ে যায়। এই মার্কেটে বসলেই তাকে চাঁদা দিতে হয়। বেচা কিনা হোক বা না হোক। কিন্তু এই টাকা কে পায় বা কার কাছে যায় সেটা কেউ জানে না। আর এই অবৈধ্য মার্কেট টাকে টিকিয়ে রেখেছে যেন অদৃশ্য কোনো শক্তি। যারা ধরা ছুয়ার বাইরে।

প্রতিদিন যদি ১৩৫টি দোকান হতে ১২০টাকা করে চাঁদা উঠে ১৬ হাজার টাকা। মাসে চাঁদা উঠে ৪ লক্ষ ৮৬ হাজার টাকা। আর বছরে চাঁদা আসে ৫৮ লক্ষ ৩২ হাজার টাকা। কিন্তু এই মার্কেটের বয়স দুই থেকে আড়াই বছর। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এখন পর্যন্ত চাঁদা উঠছে এক কোটি ৪৫ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা। কিন্তু কার কাছে যায় এই টাকা বা কে নিয়ন্ত্রয় করছে এই চোরাই হাট। এমন প্রশ্ন এখন সবার মনে। কিন্তু প্রকৃত ঘটনা তার উলট সিটি করপোরেশনের কিছু কর্মকর্তা ও পুলিশ প্রশাসন সহ মুষ্টিমেয় কিছু লোক এই বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে। যারা সব সময় ধরা ছুয়ার বাইরে থাকে।

প্রতিটি দোকানে বিদ্যুৎ লাইন রয়েছে যা সন্ধ্যার পরে মার্কেটের চিত্র ভিন্ন করে তোলে। এবং প্রতিটি দোকানে রয়েছে রাইটিংয়ের সুবিধা এবং একাধিক মোবাইল চার্জের ব্যবস্থা এই বিদ্যুৎ লাইন কোথা থেকে বা কে সরব্রহ করেন তা অনেকেই জানে না। এখানে না কি নিয়মিত চাঁদা দিলে নিরাপত্তা থেকে শুরু করে সব সেবাই মেলে।

এক ভুক্তভূগীর সাথে কথা বলে জানা যায়, এখানে ব্যবসা করে গ্রুপিং করে। কয়েকজন মিলে কয়েকটা দোকান চালায়। এরা পালা করে দোকান চালায একেক দিন একেক জন একেক দোকানে বসে এবং এখানের মোবাইলসহ কোনো জিনিসের গিরান্টি নাই টাকা নেয়ার পরে জিনিসের দায়ভার দোকান দরের না। এবং পরিচয় দিলেও অশিকার করে তারা।

আরেক জন বলে, এখানে অনেক দামি এবং অনেক ভালো মানের মোবাইলসহ অন্য জিনিস পাওয়া যায়। আমি এর আগেও এখান হতে মোবাইল কিনেছি সেটা ভালো চলছে। আজ বন্ধুর জন্য একটা নেয়ার জন্য আসছি। এরা এই মোবাইল কোথায় পায় জানতে চাইলে সে বলে, এখানে চুরায় মোবাইল পাওয়া যায় এবং এরা মাস্টার কপির সাথে এই মোবাইল বিক্রয় করে। একটু দেখে কিনলে ভালো মোবাইল পাওয়া যায়।

নাম প্রকাশে অনচ্ছুক এক ব্যবসায়ী এ প্রতিনিধিকে জানাই, আমরা চোরাই মোবাইলগুলো পায় বিভিন্ন জনের মাধ্যমে তারা এখানে এসে দিয়ে যায়। আর মাস্টার কপি মোবাইল গুলো নিয়ে আসি হাটিরপুল মোতালেব প্লাজার কিছু ব্যবসায়ীর কাছ থেকে তারা আমাদের কাছ থেকে তারা তাদের কিনা মুল্য নেয়। আর এখানে বসার জন্য প্রতিদিন আমাদের সকল ব্যবসায়ীকে ১০০ টাকা করে দিতে হয়। আর সন্ধ্যার পর লাইট জালানোর জন্য দিতে হয় ২০টাকা। কিন্ত বিদ্যুৎ আসে অন্য পথে সিটি করপোরেশন থেকে এখানে বিদ্যুৎতের লাইন আসে নি। এদের চাঁদা তোলার জন্য আলাদা লোক আছে তারা নিয়মিত সন্ধ্যা ৭টায় এসে চাঁদা তুলে নিয়ে চলে যায়।

তিনি আরো জানান, এখানে ব্যবসায়িদের কাছ থেকে যে চাঁদা উঠান হয় সেটা এলাকার রাজনৈতিক নেতারা, সিটি করপোরেশনের কিছু কর্মকর্তা কর্মচারী এবং পুলিশ প্রশাসন মিলেই এ চাঁদার টাকা খায়। এবং অনেক সময় পুলিশ এ মার্কেটে এসে যে কাউকে গাড়িতে তুলে নেয় এবং কিছু টাকা দিলে আবার ছেড়ে দেয়। তারা যে কোন সময় এসে এ ব্যবসায়িদের উপর অত্যাচার করে। এখানে কাউকে কিছু বলার থাকে না।