ঢাকা শনিবার, ২০শে এপ্রিল ২০২৪, ৮ই বৈশাখ ১৪৩১


ভারতের কথা রাখতে কঠিন সিদ্ধান্তে বিএনপি


১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০০:৪৫

শনিবার যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসি থেকে লন্ডনে উড়ে গেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল। কারণ একটাই, তারেক রহমানকে নির্বাচন পর্যন্ত দলের দায়িত্ব থেকে সরে যেতে হবে। তারেককে এমন অনুরোধ করে বসলেন ফখরুল। তবে মহাসচিবের অনুরোধে আপাতত সাড়া দেননি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। এমন অনুরোধ জানাতেই ওয়াশিংটন থেকে লন্ডনে পাড়ি দিয়েছেন মির্জা ফখরুল।

সম্প্রতি আলোচনার বসার তদবিরে ভারতে গিয়েছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস প্রেসিডেন্ট আব্দুল আউয়াল মিন্টুসহ দলটির একটি প্রতিনিধি দল। সেখানে বিএনপি নেতাদের দুটি শর্ত জুড়ে দেয়া হয়েছিল ভারতের পক্ষ থেকে। বলা হয়েছিল, তারেক জিয়ার দল থেকে সরে দাঁড়ানো এবং জামাতের সঙ্গ ছাড়তে হবে বিএনপিকে। আর শুধু এই দুটি শর্ত পূরণ করলেই বিএনপির সঙ্গে আলোচনা হতে পারে ভারতে।

ভারতের দেওয়া শর্ত নিয়ে আলোচনা করতে লন্ডনে ছুটে গিয়েছিলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ওই সময় তারেক মহাসচিবের কথা শুনে বলেছিলেন, ভারতের সঙ্গে নয় বিএনপি আলোচনা আর বাড়ানোর দরকার নেই। বরং আলোচনা হবে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে। একই সঙ্গে জাতিসংঘকেও বিএনপির অবস্থান তুলে ধরা হবে।

তারেক জিয়ার উদ্যোগেই তার নিয়োগ করা লবিস্ট ফার্মের মাধ্যমে জাতিসংঘে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরার সুযোগ পায় বিএনপি। একইসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের সঙ্গেও কথা সুযোগ আছে বলে জানা যায়। এরপরই গত মঙ্গলবার দিবাগত রাতে নিউইয়র্কের উদ্দেশ্যে দেশ ছাড়েন মির্জা ফখরুল।

ফখরুলের নিউইয়র্ক মিশনের লক্ষ্য ছিল একটাই ২০১৪ সালের মতো এবারও যেন জাতিসংঘ নির্বাচন তদারকিতে আসে। কিন্তু গত বৃহস্পতিবার এক বৈঠকে জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিব মির্জা ফখরুলকে বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতির প্রশংসা করেন। একই সঙ্গে তিনি বলেন, বাংলাদেশের নির্বাচন ও অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে এই মুহূর্তে হস্তক্ষেপ করার পরিস্থিতি তাদের নেই। একই সঙ্গে আগামী নির্বাচনে বিএনপিকে অংশ নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিব।

প্রসঙ্গত, এর আগে ২০০৬ সালেও তারেক রহমানকে একজন সন্ত্রাসী এবং সন্ত্রাসবাদের মদদদাতা হিসেবে চিহ্নিত করে যুক্তরাষ্ট্র। ওয়ান ইলেভেনে জেল থেকে বেরিয়ে তারেকের যুক্তরাষ্ট্র যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তারেক জিয়াকে ভিসা দিতে অস্বীকৃতি জানায় মার্কিন সরকার। সেই অবস্থান থেকে যুক্তরাষ্ট্রের যে কোনে পরিবর্তন হয়নি তাই পরিষ্কার হলো মির্জা ফখরুলের এই সফরে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির তিনটি বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছে,

১. একটি রাজনৈতিক দলে কীভাবে দুর্নীতিবাজ, আদালত কর্তৃক দণ্ডপ্রাপ্ত চিহ্নিত অপরাধী দলের নেতৃত্বে থাকতে পারে। বিএনপির গঠনতন্ত্রের ৭ ধারা বাতিল নিয়েও যুক্তরাষ্ট্রের যথেষ্ট আপত্তি আছে। এই ৭ ধারা বাতিল হওয়ার কারণে বিএনপি এখন দুর্নীতিবাজদের আশ্রয়স্থলে পরিণত হয়েছে বলেই মত বিশ্লেষকদের।

২. জামাতের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবির মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী সংগঠন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ২০১৭ সালে হালনাগাদ করা সন্ত্রাসী সংগঠনের তালিকায় শিবির আছে। ঐক্য থেকে জামাতকে ছাড়া নিয়ে বিএনপির সুস্পষ্ট অবস্থান জানতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। উল্লেখ্য, মার্কিন মদদপুষ্ট যুক্তফ্রন্ট ও জাতীয় ঐক্যও জামাত ছাড়ার বিষয়ে বিএনপিকে চাপ দিয়ে যাচ্ছে। জানা গেছে, মার্কিন অবস্থানের কারণেই যুক্তফ্রন্ট ও জাতীয় ঐক্যও জামাত ছাড়া বিএনপি চায়। দুটি জোটই এক অবস্থান নিয়েছে, জামাত থাকলে আমরা বিএনপির সঙ্গে নেই।

৩. তারেক জিয়ার বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে ভালোভাবেই অবহিত যুক্তরাষ্ট্র। বিভিন্ন সন্ত্রাসী গ্রুপ ও নেটওয়ার্কের সঙ্গে তারেকের সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরে পর্যাপ্ত তথ্য আছে বলে জানানো হয়। তাই বিএনপির নেতৃত্বে তারেক জিয়ার থাকা নিয়ে আপত্তি মার্কিন সরকারের।

লন্ডনের সূত্রগুলো বলছে, মির্জা ফখরুলের অনুরোধ মানতে চান না তারেক জিয়া। অন্তত ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার রায়ের আগ পর্যন্ত তারেক জিয়া কিছুতেই দল থেকে সরে দাঁড়াবেন না। তারেক জিয়া মির্জা ফখরুলকে বলেছেন, তিনি এই মুহূর্তে সরে গেলে দলের ওপরই নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

এ সময় বিএনপি মহাসচিব ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে বলেন, আনুষ্ঠানিকভাবে দল থেকে সরে দাঁড়ালেও আসলে দল তারেক জিয়াই চালাবেন। তবে এমন প্রস্তাবেই কোনো সাড়া দেননি তারেক। এখন এই ইস্যুতে বিএনপি কোনো ভাঙনের মুখে পড়বে কিনা সেটাই এখন দেখার বিষয়।

এমএ