ঢাকা শনিবার, ২০শে এপ্রিল ২০২৪, ৮ই বৈশাখ ১৪৩১


ফুটপাতে খাবার বিক্রেতা থেকে রাষ্ট্রপতি


২০ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ১৮:৫১

জন্মসূত্রে ভারতীয় বংশোদ্ভূত হলেও হালিমা ইয়াকুবের বাবা মুসলিম আর মা মালয়। ১৯৫৪ সালে হালিমার জন্ম। আট বছর বয়সে হালিমার বাবা মারা যায়। বাবার মৃত্যুর পর মায়ের সাথে ফুটপাথে খাবার বিক্রি করতেন হালিমা। কাজের পাশাপাশি হালিমা পড়াশোনা চালিয়ে যান। পরিবারের পাঁচ ভাইবোনসহ দারিদ্র্যতার সাথে যুদ্ধ করে একসময় পড়াশোনা শেষ করেন। তারপর আইনজীবী হিসেবে শুরু করেন তার পেশা।

এসব কিছুই হয়তো আমাদের চারপাশের অহরহ ঘটনার একটা অংশ। এর চেয়েও কতজনকেই আমরা খারাপভাবে জীবন যাপন করতে দেখি। কিন্তু হালিমা অন্য সবার চেয়ে আলাদা। কারন হালিমা নামের ওই নারী এখন সিঙ্গাপুরের রাষ্ট্রপতি।

বাবা ইয়াকুবের পাঁচ সন্তানের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ হালিমা। ১৯৬২ সালে মারা যান হালিমার বাবা। হালিমার বাবা পেশায় ছিলেন পাহারাদার। বাবার মৃত্যুর পর তার মাকে সংসার সামলাতে অমানবিক কষ্ট সহ্য করতে হয়েছে। রাস্তার পাশের একটি খাবারের দোকানে কাজ করে সংসার চালাতো তার মা। প্রতিদিন ভোর ৪টায় দোকানে গিয়ে বাড়ি ফিরতো রাত ১০টা বেজে যেত। রোজ স্কুলে যাওয়া-আসার পথে হালিমা দোকানটি পরিষ্কার করতো। বাসনপত্র ধুয়ে দেওয়া, টেবিল পরিষ্কার করা এবং দোকানে ক্রেতাদের খাবার পরিবেশন ছাড়াও আরো অনেক কাজ করতে হত তাকে।

এভাবেই তানজং ক্যানটং গার্লস স্কুল থেকে মাধ্যমিকের পড়াশোনা শেষ করেন ১৯৭০ সালে। পরে আইন বিষয়ে গ্রাজুয়েশন ডিগ্রি সম্পন্ন করেন সিঙ্গাপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। নানা সমস্যা আর ভোগান্তি ছিল হালিমার নিত্য দিনের সঙ্গী।

হালিমা তার এক বক্তৃতায় বলেছেন, ‘জীবনের এই মারাত্মক খারাপ সময়গুলোতে অনেকবার আত্মহত্যা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কিন্তু যখন ভেবেছি যে আমি একজন মুসলিম তখন আবার আমার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে নতুন করে জীবন সাজাতে শুরু করেছি’।

হালিমা ন্যাশনাল ট্রেডস ইউনিয়ন কংগ্রেসে (এনটিইউসি) একজন আইন কর্মকর্তা হিসেবে যোগ দেন ১৯৭৮ সালে। ক্ষমতাসীন দল পিপলস অ্যাকশন পার্টিতে যোগদানের মাধ্যমে তার রজনৈতিক জীবন শুরু হয়। ২০০১ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী গোহ চোক টংয়ের অনুরোধে হালিমা রাজনীতিতে আসেন। এরপর একটানা ৪টি সাধারণ নির্বাচনে তিনি জয়লাভ করেন। সামাজিক উন্নয়ন, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে নিযুক্ত হন ২০১১ সালে। এরপর ২০১৩ সালে সিঙ্গাপুরের সংসদে প্রথম নারী স্পিকার নিযুক্ত হওয়ার মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী আলোচনায় চলে আসেন এবং পরিচিতি অর্জন করেন।

প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে লড়ার জন্য স্পিকার পদ থেকে ইস্তফা দেন ২০১৭ সালে। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের একমাত্র বৈধ প্রার্থী হওয়ায় তাকেই প্রেসিডেন্ট হিসেবে ঘোষণা করেন দেশটির প্রধান নির্বাচনী কর্মকর্তা।

আইএমটি