ঢাকা বৃহঃস্পতিবার, ২৮শে মার্চ ২০২৪, ১৫ই চৈত্র ১৪৩০


দুই কন্যার জন্য প্রবাসী পিতার আর্তনাদ


৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ২৩:১২

দুই কন্যার জন্য ঠিক করা কম্পিউটার শিক্ষকের সাথে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েন স্ত্রী নাছিমা আক্তার। এর জেরে দুই কন্যাকে হত্যা করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন প্রবাসী স্বামী রেজাউল হক হেলাল। তার অভিযোগ স্ত্রী, পরকীয়া প্রেমিক, শ্বশুর ও শাশুরি ঠান্ডা মাথায় তার দুই কন্যা নাবিলা হক ও জামিলা হক জিমুকে হত্যা করেছে।

সৌদি আরবের রিয়াদে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করেন সৌদি প্রবাসী রেজাউল হক হেলাল। সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, তার বাড়ি ফেনী জেলার দাগনভূঞা উপজেলার ৭নং মাতুভূঞা ইউনিয়নের আশ্রাফুরে। তিনি ১৯৮৮ সালে পারিবারিকভাবে লক্ষ্মীপুর জেলার রায়পুর নিবাসী অহিদুল্লার কন্যা নাছিমা আক্তারের সাথে ঢাকার কল্যাণপুরে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। ২০০৮ সালে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্য জীবিকার তাগিদে সৌদি আরব চলে যান তিনি। এর আগে ঢাকা দনিয়া কলেজের পাশে ভাড়া বাসায় আদরের দুই কন্যা নাবিলা হক, জামিলা হক ও স্ত্রী নাছিমাকে রেখে যান।

রেজাউল হক হেলাল বলেন, আমি সৌদি আরব আসার পর বগুড়ার ছেলে কম্পিউটার শিক্ষক মশিউর রহমান মোহনকে আমার মেয়েদের কম্পিউটার শিখানোর জন্য বাসায় রাখা হয়, সেই সুবাধে সে আমার বাসায় যাতায়াত করতো। এক পর্যায়ে আমার বড় মেয়ের জন্য বিভিন্ন জায়গা থেকে বিয়ের প্রস্তাব আসতে থাকে। এর মধ্যে এই কম্পিটার শিক্ষক মশিউর রহমান মোহনও ছিল। বগুড়া এবং ফেনীর দূরত্ব বেশি হওয়ায় আমি ফেনীর শাহিন পাটোয়ারীকে যাচাইবাছাই করে মেয়ের সম্মতিতে পছন্দ করি। তাদের বিয়ে ঠিক হয়।

হেলাল বলেন, ২০১২ সালে ২৯ ফেব্রুয়ারী হঠাৎ আমার শাশুড়ি হাসিনা বেগম ও স্ত্রী নাছিমা আক্তার আমাকে ফোন করে জানান, আমার প্রথম মেয়ে যাত্রাবাড়ী দনিয়া কলেজের অনার্স তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী নাবিলা হক ব্রেন স্টোক করে মারা গেছে। এসময় হাজার ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও ভিসা জটিলতার কারণে আমি বাংলাদেশে যেতে পারিনি।

আমি যখন মেয়ের শোকে কাতর তখন স্ত্রী নাসিমা ও অপর মেয়ে জিমুর সাথে ফোনে কথা বলতে চাইলে আমার শাশুড়ি হাসিনা বেগম আমাকে নানা অজুহাত দেখাতেন। বলতেন স্ত্রী বেহুস, মেয়ে কান্নাকাটি করছে, কথা বলা যাবে না।

নাবিলা মৃত্যুর ২০-২৫ দিন পর হঠাৎ করে আমার শাশুড়ি জানান, আমার স্ত্রী মেয়ের শোকে মারা গেছেন, তখন প্রবাসে মানসিকভাবে আমি বাকরুদ্ধ হয়ে পড়ি। আমার পৈত্রিক বাড়ি থেকে শ্বশুর বাড়ির দূরত্ব বেশি হওয়ায় এবং আমি প্রবাসে থাকায় অনেক বিষয় আমার অগোচরে থেকে যায়।

নাবিলার মায়ের মৃত্যুর খবরের ৬-৭ মাস পর আমি বিভিন্ন সূত্রে খবর পাই, আমার স্ত্রী নাসিমা আক্তার মেয়েদের কম্পিউটার শিক্ষক লম্পট প্রতারক মশিউর রহমানের সাথে পরকীয়া প্রেমে লিপ্ত হয়ে ২৫ বছরের সাজানো সংসার ভেঙে অর্থ-সম্পদ নিয়ে পালিয়ে যায়। এসময় আমার শাশুড়ির কাছে এই বিষয়ে জানতে চাইলে তিনিও নিজ মেয়ের উপর মেজাজ দেখানোর ভান করেন এবং আমাকে বলেছিলেন তারা কলঙ্কিত মেয়ে নাছিমাকে ত্যাজ্য করেছেন। তখনো আমার ইকামা সমস্যার সমাধান না হওয়ায় আমি দেশে যেতে পারিনি।

আমার ছোট মেয়ে জামিলা হক জিমু তার নানীর কাছে রায়পুরে থাকতো এবং রায়পুর এলএম স্কুলে ছষ্ঠ শ্রেণিতে তাকে ভর্তি করা হয়। মেয়ের যাবতীয় খরচ আমার শাশুড়ির মাধ্যমে আমি চালিয়ে গেছি। বিগত ২০১৫-১৬ সালের কোন এক সময় অজানা গন্তব্য থেকে ফিরে এসে আমার শ্বশুর শাশুড়িকে ম্যানেজ করে স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে আমার মেয়ে জিমুর পিতা সেজে রায়পুর পৌরসভায় আমার শ্বশুরের বাড়িতে আশ্রয় নেয় পরকীয়া প্রেমিক মশিউর রহমান মোহন ও নাছিমা আক্তার।

হেলাল অভিযোগ করে বলেন, আমার বৃদ্ধা মা দিলবাহার বেগম কয়েক দফা আমার মেয়ে জিমুকে রায়পুর থেকে আনতে গিয়ে জিমুর নানা-নানীর অমতের কারণে মেয়েকে ফেনীর বাড়িতে আনতে ব্যর্থ হয়। গত ২৭শে আগষ্ট বাংলাদেশ থেকে খবর পাই রায়পুর রেসিডেন্সিয়াল স্কুল এন্ড কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী আমার মেয়ে জামিলা হক জিমু মারা গেছে!

এ খবর পাওয়ার পর ফেনী থেকে আমার নিকটাত্মীয়রা রায়পুর ছুটে যায়। সেখানে গিয়ে তারা জানতে পারে লাশ ময়নাতদন্তের জন্য লক্ষ্মীপুর নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ঐ বাড়িতে জিমুর নিকটাত্মীয়দেরকে অনেক খোঁজাখুঁজির পর এক পর্যায়ে হঠাৎ নাবিলার মায়ের সাথে দেখা হলে কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই সে পালিয়ে যায়। আমার নিকটাত্মীয়রা প্রতিবেশীদের কাছে খোঁজ নিয়ে জানতে পারে আমার জিমু ফেনীতে তার বাবার বাড়িতে বেড়াতে যাওয়ার বায়না ধরলে তার মা ও মায়ের পরকীয়া প্রেমিক মশিউর রহমান জিমুকে হত্যা করে।

সংবাদ সম্মেলনে হেলাল কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমি আশংকা করছি, আমার বড় মেয়ে নাবিলা হক ও জামিলা হক জিমু দুইজনকে পরকীয়ার কারণে পরিকল্পিত ভাবে ঠান্ডা মাথায় নাছিমা আক্তার ও মশিউর রহমান মোহন হত্যা করেছে। তারা আমার দুই মেয়েকে পরকীয়ার বলি বানিয়ে দুনিয়া থেকে বিদায় এবং আমার সাজানো সংসার ধ্বংস করে দিয়েছে। এসময় তিনি এ ঘটনায় স্ত্রী ও তার পরকীয়া প্রেমিক, শ্বশুর এবং শাশুড়িকে গ্রেফতার করে প্রধানমন্ত্রীর কাছে ন্যায় বিচার দাবি করেন।

এসএ