ঢাকা বৃহঃস্পতিবার, ২৮শে মার্চ ২০২৪, ১৫ই চৈত্র ১৪৩০


জাফর ইকবালের বিদায়


৫ অক্টোবর ২০১৮ ০২:২২

বাংলাদেশের মানুষের যিনি তুমুল জনপ্রিয় তিনিই ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে গত বুধবার শিক্ষকতা জীবনের শেষ কার্যদিবস পার করে বৃহস্পতিবার থেকে অবসরে গেছেন কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের এই অধ্যাপক। এছাড়া অবসরে যাওয়ার আগে তড়িৎ কৌশল বিভাগের প্রধান হিসেবেও কর্মরত ছিলেন তিনি।

ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল একজন পদার্থবিদ ও শিক্ষাবিদ। এছাড়া লেখক হিসেবেও তার রয়েছে সমান দক্ষতা। বাংলাদেশে বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীর পথিকৃৎ হিসেবে গণ্য করা হয় তাকে, শিশুসাহিত্যিক হিসেবেও তার যথেষ্ট খ্যাতি রয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিপরীক্ষায় অনলাইনে আবেদন করার পদ্ধতির প্রচলণ করে সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের ভোগান্তি কমিয়েছেন, গণিত অলিম্পিয়াডে সূচণা করে দেশের শিক্ষার্থীদের গণিতের প্রতি আগ্রহী করে তুলেছেন এই ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালই। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পাঠ্যবই সংশোধনী কমিটির নেতৃত্বেও আছেন তিনি। এছাড়া তিনি সকল বিশ্ববিদ্যালয়ে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা চালুর উদ্দেশ্যেও কাজ করে যাচ্ছেন।

কিন্তু দেশের শিক্ষা ও সাহিত্য ক্ষেত্রে এত অবদান রাখার পরও দেশের একটা শ্রেণির কাছে অজনপ্রিয় কেন তিনি? কারণটা খুব সহজ। মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তির একজন বীর যোদ্ধা ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল। একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত রাজাকার-আলবদরদের বিচারের দাবিতে সবসময় সোচ্চার ছিলেন তিনি। আজীবন লেখালেখি করেছেন মুক্তিযুদ্ধের ওপর। নিজের লেখা কলাম, গ্রন্থে সবসময় মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষে কথা বলেছেন। তাই এক শ্রেণির মানুষ তাকে ঘৃণার চোখে দেখবে এতে অবাক হবার কিছু নেই।

ছাত্র জীবনে অনেক মেধাবী ছিলেন ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করে পরবর্তীতে ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি পিএইচ.ডি সম্পন্ন করেন। ১৯৮৮ সালে বিখ্যাত বেল কমিউনিকেশনস রিসার্চ (বেলকোর) এ গবেষক হিসাবে যোগদান করেন এবং ১৯৯৪ পর্যন্ত সেখানেই কাজ করেন ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল। কিন্তু দেশের টানে সে বছরই বাংলাদেশে ফিরে এসে সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের বিভাগীয় প্রধান হিসেবে যোগদান করেন তিনি। শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অগ্রযাত্রায় অসামান্য অবদান রয়েছে ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল ও তার স্ত্রী পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. ইয়াসমিন হকের।

অবসর ছুটিতে যাওয়ার মাধ্যমে গতকাল ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালের উজ্জ্বল কর্মজীবনের একটি অংশের পরিসমাপ্তি ঘটলো। কিন্তু দেশপ্রেমের কারণে তিনি যে দেশের শিক্ষাব্যবস্থা ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আমৃত্যু অবদান রেখে যাবেন এ কথা কোনো ঝুঁকি ছাড়াই বলা যায়। রাজনৈতিক ভাবাদর্শের কারণে দেশের একদল মানুষের কাছে অপ্রিয় হলেও ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালকে তাঁর কাজের জন্য শ্রদ্ধাভরেই স্মরণ করবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী মানুষেরা।

এমএ