ঢাকা বৃহঃস্পতিবার, ২৫শে এপ্রিল ২০২৪, ১৩ই বৈশাখ ১৪৩১


ঝিনাইদহে ৮ মাসে ৩২ লাশ


১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ২১:২১

ঝিনাইদহে গত ৮ মাসে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত ও খুনসহ ৩২টি লাশ উদ্ধারের ঘটনা ঘটেছে। নিহতদের মধ্যে ছিনতাইকারীদের হাতে সাইফুল নামে এক সেনা সদস্য ও ধারালো অস্ত্রের আঘাতে পান বিক্রেতা জালাল উদ্দীন রয়েছেন। প্রাপ্ত তথ্যমতে, জেলাব্যাপী লাশ উদ্ধার হয়েছে ৯ জনের। খুনের ঘটনা ঘটেছে ১৪টি। বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন ৯ জন।

বিভিন্ন থানা সূত্রে জানা গেছে, কালীগঞ্জে ১০ জন, কোটচাঁদপুরে ১ জন, মহেশপুরে ৪ জন, সদর উপজেলায় ৭ জন, হরিণাকুন্ডুতে ৭ জন ও শৈলকুপায় ৩ জনের লাশ উদ্ধার হয়েছে। উদ্ধার হওয়া লাশের মধ্যে ময়নাতদন্তে অনেকের অপমৃত্যু ও খুনের আলামত পেয়েছে পুলিশ।

জানা গেছে, ২০১৮ সালের ৩ জানুয়ারি হরিণাকুন্ডুর ধুলে শ্রীপুর গ্রামে শিশু লিথিকে আছাড় মেরে হত্যা করা হয়। ৪ জানুয়ারি শৈলকুপার ট্রাক ব্যবসায়ী রিয়াজুলকে গুম করা হয়। ৬ জানুয়ারি শৈলকুপার ত্রীবেনী গ্রামে সেরমি নামে একজনকে হত্যার পর তার ব্যাটারি চালিত ইজিবাইক নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। ৭ জানুয়ারি কালীগঞ্জের বেলাট দৌলতপুর থেকে মুন্না নামে এক ব্যক্তিকে গামছা পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা।

২১ জানুয়ারি কালীগঞ্জের মান্দারতলায় অজ্ঞাত ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। ১২ ফেব্রুয়ারি মহেশপুরের শ্যামকুড় গ্রামে ওয়াসিমকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। ১৮ ফেব্রুয়ারি ঝিনাইদহ শহরের কেসি কলেজের পাশে পান বিক্রেতা জালালকে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করে ছিনতাইকারীরা। ছাগলে ক্ষেত খাওয়ায় ২৮ এপ্রিল কালীগঞ্জের শিবনগর গ্রামে মিলা দাসকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। ২৭ মে ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলায় বন্দুকযুদ্ধে রফিকুল ইসলাম নামে এক যুবদল নেতা নিহত হয়।

২১ জুন হরিণাকুন্ডুর বাহাদুরপুর গ্রাম থেকে রিপন ও আওয়ালের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ময়নাতদন্তে তাদের মৃত্যুর কারণ বিষপানে বলে প্রমাণিত হয়। ২৮ আগস্ট সদর উপজেলার পার্বতীপুর গ্রাম থেকে কলেজ ছাত্র আরিফুলের গলিত লাশ উদ্ধার করে। ময়নাতদন্তে আরিফ আত্মহত্যা করেছে বলে প্রমাণ পায় পুলিশ।
৮ জুলাই ঝিনাইদহ সদরের পবহাটি এলাকায় র‌্যাবের সাথে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন দুই জন। র‌্যাব দাবি তারা তারে মাদককারবারি।

১৪ জুলাই কালীগঞ্জের আগমুন্দিয়া থেকে অজ্ঞাত ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ২৩ জুলাই মহেশপুরের কোদালা নদী থেকে রেহেনা আক্তার ও কোটচাঁদপুরের দোড়া গ্রামের একটি পুকুর থেকে রাশেদা খাতুনের লাশ উদ্ধার করা হয়। ১৮ জুলাই ঝিনাইদহের হরিণাকুন্ডু উপজেলার র‌্যাবের সাথে বন্দুকযুদ্ধে আমিরুল ইসলাম পঁচা নামে এক ডাকাত নিহত হয়।

২১ জুলাই মহেশপুরের বেতবাড়িয়া গ্রামে ছেলের লাঠির আঘাতে পিতা মাহাতাব খুন হয়। ১ আগস্ট ঝিনাইদহ শহরের কেন্দ্রীয় বাসটার্মিনাল এলাকায় ছুরকাঘাত করে মিজানুরকে হত্যা করা হয়। ১৮ আগস্ট ঝিনাইদহ সদর উপজেলার বংকিরা গ্রামে সেনা সদস্য সাইফুলকে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এই মামলায় তিন আসামিকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি গ্রহণ করে।

এছাড়াও ১ সেপ্টেম্বর কালীগঞ্জে এক নবজাতকের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ৩ সেপ্টেম্বর হরিণাকুন্ডুর মান্দিয়া বিলে স্ত্রীর পরকিয়ার বলি হন কালাপাড়িয়া গ্রামের তোয়াজ উদ্দীন। ৪ সেপ্টম্বর কালীগঞ্জের ফুলবাড়িয়া রেলগেট এলাকায় যশোরের মুফা নামে একজনকে গুলি করে হত্যা করা হয়। তাকে পুলিশ পরিচয়ে একদল হেলমেট পরিহিত ব্যক্তিরা তুলে আনে বলে তার পরিবারের অভিযোগ। সর্বশেষ ১৬ সেপ্টেম্বর ঝিনাইদহের হরিণাকুন্ডু উপজেলার চারাতলা বাজারের মাঠে বাদশা মন্ডল নামের এক ব্যক্তিকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।

বিষয়টি নিয়ে ঝিনাইদহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মিলু মিয়া বিশ্বাস বলেন, জেলায় সংঘটিত প্রতিটি খুনের রহস্য উন্মোচিত হয়েছে। আসামিদের গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনা হয়েছে। তাদের মধ্যে বেশির ভাগ ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়ে খুনের সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন।

তিনি বলেন, বন্দুকযুদ্ধের বিষয়টি ছিল মাদক বা সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানের অংশ। এটা আইনশৃঙ্খলা অবনতির মধ্যে পড়ে না। যে সব লাশ উদ্ধার হয়েছে তা সড়ক দুর্ঘটনা, অপমৃত্যু বা সাধারণ ঘটনার মধ্যে পড়ে।

আইএমটি